• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

একটা ছকের মধ্যে পড়ে গেছি : শ্রাবণী ফেরদৌস

  ০৮ মার্চ ২০২২, ১৮:৫০
একটা ছকের মধ্যে পড়ে গেছি : শ্রাবণী ফেরদৌস

আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। আর এই উপলক্ষে দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচার হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। তার পরিপ্রেক্ষিতে আরটিভিতে রাত ৮টায় প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘অনাহুত’।

শ্রাবণী ফেরদৌসের রচনা ও পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। রঙিলা ভুবনে আমাদের আজকের অতিথি তিনি। এই নাটকটির গল্পের প্রেক্ষাপট, সমসাময়িক ব্যস্ততা, নির্মাণ জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে। তার সঙ্গে একান্ত আলাপ করেছেন কুদরত উল্লাহ

আরটিভি : ‘অনাহুত’ নাটকটির গল্প-ভাবনা কেমন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : এই নাটকের গল্পের ভাবনাটা হচ্ছে, যিনি দেখবেন তার কাছে মনে হবে এটা তারই গল্প। যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে বোনের গল্প বা আমার আশপাশের কোনো ফ্ল্যাটের গল্প। আমরা মেয়েরা অনেক কিছুই আমাদের সংসারে মুখ বুজে সহ্য করি বা মেনে নিই। এই গল্পের মেয়েটি মুখ বুজে সহ্য করার ব্যাপারটি মানেনি। সে অনেক বেশি স্বাধীনচেতা। সে তার সংসার থেকে বেরিয়ে এসে অন্যরকম একটা জীবন বেছে নেয়। গল্পের ভাবনাটা এমনই। তবে, গল্পের শেষে একটা টুইস্ট আছে যা না দেখলে বোঝা যাবে না।

আরটিভি : সাম্প্রতিক সময়ের অন্যান্য ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন...

শ্রাবণী ফেরদৌস : সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েলিটি শো নিয়ে ব্যস্ত আছি। ‘বিগ বো’ নামে আমাদের একটা রিয়েলিটি শোয়ের শুটিং শেষ হয়েছে। এতে আমি লাইন প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছি। তারপর ‘গলি কাপ’ বলে একটা শো হয়েছে আমাদের। ওটাতে এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছি। এর ভেতরে বেশ কয়েকটি টিভিসি ও ওভিসি করা হয়েছে। এখন একটু অন্যরকম কাজ করার চেষ্টা করছি। কারণ, অন্যরকম একটা ভালো লাগছে, অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অন্যদিকে নাটকে ভালো কিছু করতে চাচ্ছি। কারণ, নাটকে ছোটখাটো একটা বিরতি আছে। এ ছাড়া বর্তমানে ব্যস্ত আছি প্রজেক্ট পেপার তৈরি করা নিয়ে, দেখা যাক সামনে কি হয়।

আরটিভি : দীর্ঘ বছর ধরে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত, পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কী বলবেন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : পুরোটা জুড়েই তো না পাওয়া। এমন কিছুই করিনি এখন পর্যন্ত যা প্রাপ্তির খাতায় লেখা হবে। যা করেছি তা শুধুই চেষ্টা করেছি মাত্র। এখনও শেখার পর্যায়ে আছি যেটা অনূভব করি। শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে এখনও ক,খ,অ,আ পর্যন্ত আছি। জানি না কতটুকু শিখতে পারব এই জীবনে। জীবনটা অনেক ছোট, অনেক বড় দরকার ছিল। শেখার জায়গাগুলো আরও ব্যাপক হওয়ার দরকার ছিল। আমাদের দেশে যেটা একদমই অপ্রতুল। এখন তো আবার অনলাইনের সময়। তাই পুরো পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয়। অনেক কিছুই দেখছি আর ভাবছি নতুন করে।

আরটিভি : সব সময়ই, বাজেট ও অভিনয়শিল্পীদের সেটে আসা নিয়ে একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

শ্রাবণী ফেরদৌস : বাজেটের কথা যদি বলি (টিভি ইন্ডাস্ট্রির কথা) তাহলে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এই বাজেট কমার জন্য কাকে দায়ী করব এটা বলা মুশকিল। চ্যানেল কতৃপক্ষকে আরও একটু সহনশীল হওয়া উচিত বলে মনে হয়। কারণ, প্রতিটি নির্মাতাই চায় ভালো কাজ করতে। সেক্ষেত্রে বাজেট কমে যাওয়ার কারণে প্রোডাকশনের মান নিম্নমুখী হয়ে যাচ্ছে। সেহেতু ভালো নির্মাতারা সরে যাচ্ছে একমাত্র বাজেটের কারণে। তাই যারা অভিনয় করতে ইচ্ছুক ছিল বা মিডিয়ার অন্যান্য সেক্টরে কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল তারা সবাই এখন নির্মাতা হয়ে যাচ্ছে। যা তারা কোনোদিন শিখতেই পারেনি। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সেটে দেরি করে আসছে সেটা আমি বলতে চাই না। আসলে তাড়না ফিল করছে না। অভিনয়শিল্পীকে তো ফিল করতে হবে যে... আমি একটা ভালো কনটেন্ট করতে যাচ্ছি। এই তাড়না যখন তার ফিল হবে তখনই সে ইন টাইমে সেটে আসবে।

আরটিভি : একটি ভালো মানের নাটক নির্মাণের জন্য কী পরিমাণ বাজেট থাকা লাগে?

শ্রাবণী ফেরদৌস : আসলে ভালোর তো শেষ নেই। বাজেট ভালো পেলে অনেক ভালো কাজ করার সম্ভব সেটাও না।সেখানে প্রপার বাজেটটা দরকার। আমার স্ক্রিপ্টটা কি লেভেলের বাজেট ডিমান্ড করছে সেটাই জরুরি। আমার স্ক্রিপ্ট যদি ২ লাখ টাকা ডিমান্ড করে, কিন্তু আমাকে যদি ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় তাহলে আমি অনেক ভালো একটা প্রোডাকশন বানিয়ে দেখাব বিষিয়টা এমন না। আমি সেটা বলতেও চাই না। আমার মনে হয় প্রপার বাজেট হওয়া জরুরি। হ্যাঁ... এত টাকা চাই তাহলে আমরা একটা ভালো কাজ করতে পারব। এটা ডিপেন্ড করবে স্ক্রিপ্টের ওপর, চরিত্রের ওপর। ক্যারেক্টারে কাকে নিতে চাচ্ছি তার ওপরে, প্রোডাকশন ডিজাইনের ওপরে।

আরটিভি : আপনার নির্মাণের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

শ্রাবণী ফেরদৌস : নির্মাণের শুরুটা হচ্ছে আমি আসলে সহকারী নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছি অনেক দিন। সে সময় ইচ্ছে ছিল প্রচণ্ডভাবে অভিনয় করব। আমি মাস্টার্স করেছি অভিনয়ে। তাই অভিনয়ের ওপর ভীষণরকম একটা নেশা ছিল। মঞ্চ করতাম, মঞ্চ এখনও করি। তো সেই জায়গা থেকে অভিনয়ই করব এমন একটা ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ব্যাটে-বলে আর হয়নি। তাই সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করি। একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রথম এককভাবে নাটক নির্মাণ শুরু হয়। এই তো এরপর থেকে শুরু হয় নির্মাতার জীবন। পাশপাশি নিয়মিত চিত্রনাট্যও লিখছি।

আরটিভি : নির্মাণের বাইরে আর কীভাবে সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত থাকেন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : আসলে একজন মঞ্চের কর্মীকে সবই পারতে হয়। নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তি মানে নবরস, নবরসের সবই থাকে অভিনয়ে। মঞ্চ যারা করে তাদের সব শিখতে হয়। যেহেতু পড়াশোনাটাই আমার ড্রামা নিয়ে, তাই শেখাটা ভার্সিটি থেকেই শুরু। ৫ বছর ধরে অল্প অল্প করে এসব করা হয়েছে, ভালোই লাগে। কালচারাল সব কিছুই আমাকে সব সময় টানে।

আরটিভি : নির্মাণের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : আমার প্রথম প্রোডাকশনটা যে এফোর্ট দিয়ে করেছি, পরের প্রোডাকশনগুলতে অনেক... অনেক ফাঁকির ব্যাপার ছিল। সত্যি বলতে অনেক... অনেক ছিল। তো এই ফাঁকিগুলো না দিলেই ভালো। নিজের কাছে নিজের সৎ থাকাটা খুব জরুরি। এ জন্যই আমি ইদানিং গ্যাপ দিয়েছি কাজে। এই ব্রেক নেওয়াটা জরুরি মনে করেছি। কারণ, একটানা শুটিং করছি কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই। এটা খুবই অন্যায় মনে হচ্ছিল নিজের কাছেই নিজের। তাই নিজেকে প্রস্তুত করছি আগামী দিনগুলোর জন্য।

আরটিভি : নির্মাণে আসার জন্য পরিবার থেকে সাপোর্ট কতটুকু পেয়েছেন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : পরিবারের সাপোর্ট বলতে আমার ফ্যামিলি ধার্মিক। তো বাবা মায়ের কেউই পছন্দ করত না এই লাইনের পড়াশোনা। বড় ভাই চারুকলায় পড়াশোনা করেছে পুরো নিয়ম ভেঙে। তো বড় ভাই যেহেতু নিয়ম ভাঙতে পেরেছে ওই জায়গা থেকে আমি সাহসটা পেয়েছি নাটকে পড়ার। ওইভাবে বড়জন করতে পেরেছে বলেই আমি ছোটজন করতে পেরেছি। এই আর কি! সাপোর্ট ওই অর্থে কিছুই ছিল না। এখন পরিবারের সবাই আনন্দ পায়। আমাকে জানায় তোকে তো ইন্টারভিউতে দেখতে পাচ্ছি, তোর নাটকটা দেখা যাচ্ছে।

আরটিভি : নির্মাণে নারী হিসেবে কোনো ধরনের বাধা পেয়েছেন?

শ্রাবণী ফেরদৌস : আসলে মেয়েদের তো জন্মগত দিক থেকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার থেকে যদি বলেন, বিয়ের পর যদি বলেন, একটা সন্তানকে কিন্তু মেয়েদেরকেই পালতে হয়। তো যখন আমার সন্তানকে সময় দিতে হয়, আমার ফ্যামিলিকে সময় দিতে হয়, আমার সংসারের কাজকর্ম আমাকে টেক-কেয়ার করতে হয়, দিনশেষে মেয়েদের দায়ভার সবকিছু। এত সব কাজে আমাকে যেতে হয়। কিন্তু একটা ছেলেকে এগুলো খুব বেশি করতে হয় না। একটা ছকের মধ্যে পড়ে গেছি। এই ছক থেকে বের হওয়া যায়, কিন্তু হচ্ছে না। হবে কি না আদৌ জানি না। বাধাগুলো পেরিয়ে ছেলেরা যেভাবে এগিয়ে যায় মেয়েদেরও এগিয়ে যেতে হয়। ছেলেদেরও বাধা আসে মেয়েদেরও বাধা আসে বিভিন্ন রকম। তো এভাবেই সব পেরিয়ে যেতে হয়। জীবনটাই অনেক সংগ্রামের, বা একটু টেকনিক্যাল, একটু গুছিয়ে নেওয়ায় বিষয়। এগুলোর ভেতর দিয়েই যেতে হয় সব সেক্টরেই। আমাদের মিডিয়ার সেক্টর ব্যতিক্রম না। এভাবেই আসলে কাজ করতে হয়। ঠিক সে ভাবেই কাজ করছি।

মন্তব্য করুন

daraz
  • সাক্ষাৎকার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সাক্ষাৎকারেই নিয়োগ দেবে আবুল খায়ের গ্রুপ, লাগবে না অভিজ্ঞতা
সাংবাদিক বোনের সাক্ষাৎকারে যা বললেন জাকের 
নিজেকে নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন ড. ইউনূস
বাইডেন নাকি ট্রাম্প, কাকে পছন্দ জানালেন পুতিন
X
Fresh