‘বিশেষ প্রজাতির হাঁস পালনে দেশে নীরব বিপ্লব ঘটেছে’
বাংলাদেশে একটি সময় হাঁস পালন হতো গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে। দেশে সরকারি বেসরকারি গবেষকদের হিসেবে বর্তমানে দেশে হাঁসের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। হাঁস-পালনে খাদ্য খরচ অনেক কম এবং রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি কম থাকায় এ খাতটিকে সম্ভবনায়ম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ এনিমেল ব্রিডিং অ্যাণ্ড জেনেটিক্সের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, গত দুইদশকে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের বিস্তৃত হাওড় এলাকায় হাঁস চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। দেশের এই বিপ্লবের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন বিদেশি জাতের হাঁসগুলো। আমরাও গবেষণা করছি যে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত অধিক উৎপাদনশীল হাঁসের জাত উদ্ভাবনে।
তিনি আরও জানান সম্প্রতি পিকিং জাতের হাঁসের সাথে নাগেশ্বরী জাতের হাঁসের ক্রস করে নতুন জাতের উদ্ভাবন করেছেন তার একদল সহকর্মী।
হাঁসের জাত উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে দেশের বিজ্ঞানীরা। যে জাত বেশি ডিম দেবে কিন্তু রোগ বালাই কম হবে, এমন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশে আগে শুধু দেশি হাঁস ছিল যা বছরে ৪০-৫০ টি ডিম দিতে পারতো। তবে এখন অনেক প্রজাতির হাঁস আছে যেগুলো থেকে বছরে প্রায় দুইশর বেশি ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে খামারিরা যাতে হাঁসের ডিম ও মাংস উৎপাদনে বেশি লাভ করতে পারে এবং মানুষও যাতে ন্যায্যমূল্যে এসব পেতে পারে এজন্য দেশি বিদেশি জাতের হাঁস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
বাংলাদেশের সরকারি হিসেবে এখন দেশে হাঁসের খামার আছে প্রায় আট হাজার। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে গড়ে উঠছে হাঁসের খামার।
জানা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনার হাওর এলাকায় প্রায় ত্রিশ হাজার হাঁসের খামার আছে। চাষিরা বলছেন হাঁস চাষ লাভজনক কয়েকটি কারণে। প্রথমত খাবার খরচ কম ও হাঁসের রোগ বালাই অনেক কম হয়।
নেত্রকোনা হাওর থাকায় বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয় না খামার চাষিদের। খাবার হাঁস হাওর থেকেই খেয়ে নেয় যার কারণে খরচ অনেক কম হয়।
ময়মনসিংহের সরকারি হাঁস প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক সারোয়ার আহমেদ বলেন, ভালো জাতের হাঁস আর জলাভূমি থাকলে হাঁস পালনই হতে পারে সবচেয়ে ভালো প্রকল্প।
হাঁস পালনের ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম। এরা বিস্তীর্ণ নদ-নদী, হাওর বাওর, খাল বিল বা পুকুরে একসাথে ঘুরতে ও খাবার সংগ্রহ করে থাকেন। অবাক করার বিষয় এরা প্রায় অন্তত ত্রিশ ভাগ খাবার এসব জায়গা থেকে পেয়ে থাকেন। এই কারণে খাবার খরচ অনেক কম। এছাড়াও হাঁসের ক্ষেত্রে তেমন কোন মেডিসিন প্রয়োজন হয় না।
হাঁসের জাত:
হাঁস সবসময় প্রাকৃতিক পানি থেকেই মাছ, শামুক,ঝিনুক, পোকামাকড়সহ বিভিন্ন ধরণে জলজ উদ্ভিদ খাবার খেয়ে থাকে যার কারণে অন্য খাদ্যের প্রয়োজন খুব কম। অন্যদিকে পুকুরে হাঁস চাষ করলে সার ও মাছে খাদ্য ছাড়াই সহজে মাছ উৎপাদ বৃদ্ধি সম্ভব।
সাধারণ মানুষের কাছে তিন ধরণের হাঁস খুব সুপরিচিত- চীনা হাঁস, পাতি হাঁস ও রাজহাঁস। দেশের আবহাওয়ায় এসব হাঁস অনেক দিন ধরেই সহজভাবেই পালন করা সম্ভব হয়।
সরকারি হাঁস প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক সারোয়ার আহমেদ বলেন, দেশের যে কোন জায়গাতেই হাঁস চাষ সম্ভব। তবে হাঁস যদি পুকুরে চাষ করা যায় তাহলে লাভ বেশি আসতে পারে কারণ হাঁস বেশি প্রোটিন পায়।
বর্তমানে দেশি হাঁসের বাইরে জিংডি, খাকি ক্যাম্পবেল, পিকিং, ইন্ডিয়ান রানার ও মাসকোভি জাতের হাস বেশি দেখা যায়।
এরি মধ্যে দেশি হাঁস থেকে বছরে ডিম উৎপাদ হয় ৭০-৮০ টি। অন্যদিকে উন্নত ব্যবস্থাপনায় এগুলো দেশি সাদা ও দেশি কালো বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২০৫ টি ডিম দিয়ে থাকে।
বছরে একটি খাকি ক্যাম্পেল আড়াইশ থেকে তিনশ ডিম দিতে পারে এবং আরাইশর মতো ডিম দিতে সক্ষম জিডিং ও ইন্ডিয়ান রানার হাঁস।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরামর্শ:
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস মতে হাঁসের বাসস্থানের ক্ষেত্রে যে বিষয় মনে রাখতে হবে।
১.ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেন বন্যার সময় পানিতে ডুবে না যায়।
৫. পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৬. খোলামেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ হতে হবে।
৭. চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
অল্প খরচে ব্যবসা যদি হয় তাহলে কেন নয় হাঁসের খামার। তারণ্যের বেকারত্বকে জয় করার বিকল্প উপায় হতে পারে হাঁসের খামারের মাধ্যম।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
জিএম/ এমকে
মন্তব্য করুন