করোনা মোকাবিলায় 'স্কলারশিপ ফর বাংলাদেশ'
মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে আজ অবরুদ্ধ বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রভাব শুধু খাদ্য বা কর্ম জীবনে নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে পড়েছে। বেশ কয়েকমাস যাবত আমাদের দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বন্ধ। এর ফলে থমকে গেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রবলভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ মনে করে, তরুণ প্রজন্ম আমাদের বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে এবং এই কঠিন সময়ে আমাদের দরকার তাদের পাশে থাকা। সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই সহায়তা দিচ্ছেন কিন্তু এসব সহায়তায় প্রথমত খাবার, শিশুখাদ্য, ওষুধ গুরুত্ব পেয়েছে। এসব সহায়তা প্যাকেজে শিক্ষা সহায়তা ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি।
এই সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছে ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশের আয়োজনে ও মালয়েশিয়া ভিত্তিক তরুণদের সংগঠন ‘ইয়ুথ হাব’, ১ কোটি ১০ লাখ প্রবাসীদের সংঘটন ‘এন আর বি সাপোর্ট ও এসো সবাই’ এর সহোযোগীতায় 'স্কলারশিপ ফর বাংলাদেশ' প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্রছাত্রীদের করোনা কালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন, যারা টিউশনি অথবা পার্টাইম কাজ করে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচ বহন করেন। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই পরিবারের দৈনন্দিন খরচ বহন করেন তাদের কামানো এই সামান্য কিছু অর্থ দিয়েই। কিন্তু করোনাকালীন তাদের হাতে নেই টিউশনি, নেই চাকরী, নেই কোনো অর্থ। অনেকের পরিবারে অসুস্থ সদস্য হাহাকার করছে অসুখে, কিন্তু ঔষধ কেনার টাকা নেই। এই কঠিন মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়াতে ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে 'অনির্বান' শিক্ষাবৃত্তি। প্রাথমিকভাবে এই শিক্ষাবৃত্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০০ টাকা করে অন্তত ৭০০ জন শিক্ষার্থীকে অর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে এই শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে।
অপর দিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য নারী ও মেয়ে শিশুদের পিরিয়ড বা মাসিকের সময় অনেক কিশোরী ও মা এর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা এখন দুঃসাধ্য হয়ে পরেছে। লকডাউনের কারণে অনেকের হাতে টাকা থাকলেও বাইরে গিয়ে কিনতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে পণ্যটিও পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক তরুণদের সংগঠন ইয়ুথ হাব এর ত্রিকোণমিতি প্রকল্প। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ অন্যান্য নারীদের জরুরি আইটেম গুলো সচ্ছলদের বাজারমূল্যে কোন সার্ভিস চার্জ ছাড়াই বাসায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি, পাশাপাশি অসচ্ছলদের বিনামূল্যে দেয়া।
ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান ফাহাদ বলেন, স্কলারশিপ ফর বাংলাদেশ থেকে আমরা যে দুইটি প্রজেক্টকে আমরা সাপোর্ট করছি তা হচ্ছে অনির্বান, করোনা কালীন শিক্ষাবৃত্তি ও ত্রিকোণমিতি - বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ। আমরা মনে করি এই স্কলারশিপে আপনার অংশগ্রহণ ও সহায়তা আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেশকে যেভাবে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।
ইয়ুথ হাবের ত্রিকোণমিতি প্রকল্পের সমন্বয়ক রাদিয়া রাইয়ান চৌধুরী বলেন- পিরিয়ড নারীদের অতি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা তাদের শারীরিক সুস্থতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু আমাদের দেশে পিরিয়ড বা মাসিক ব্যাপারটা উপেক্ষিত। বিষয়টি এতোই গোপনীয়তায় রাখা হয় যে পরিবারের একজন নারীর মাসিক হলে অন্য নারী সদস্যারাও টের পান না। আর পুরুষরা তো না-ই। আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই তাদের পরিবারের পুরুষদের অতিপ্রয়োজনীয় এই জিনিস গুলো কিনতে বলতে সংকোচ করে থাকে। অনেকে বলতে না পারার কারণে অস্বাস্থ্যকর ভাবে পিরিয়ডের সময়টা অতিবাহিত করে। বাংলাদেশের মাত্র ১৪% নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, এমনকি ক্যান্সারে পর্যন্ত আক্রান্ত হন নারীরা। বিশেষ করে, করোনা ভাইরাসের এই লকডাউনে অনেক নারীই স্যানিটারি ন্যাপকিন, হেয়ার রিমুভার, ওমেন রেজার ও প্রেগনেন্সি টেষ্ট স্ট্রিপ সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না। এতে করে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়ছে। এই সমস্যার সমাধানে আমাদের এই উদ্যোগ। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঈশ্বরগঞ্জ, নরসিংদী সহ বিভিন্ন স্থানে ৩০০ জন নারীর মাঝে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছি।
ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ ও ইয়ুথ হাবের সাথে 'এন আর বি সাপর্ট' ও 'এসো সবাই' সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
জিএ
মন্তব্য করুন