শিল্পপতি লতিফুর রহমানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফুর রহমানের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট ভারতের জলপাইগুড়িতে। বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন (কেএফসি) প্রচলনের জন্য তিনি পরিচিত। দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

লতিফুর রহমান পড়াশোনা শুরু করেন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে চলে যান হলিক্রস স্কুলে। সে সময় হলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে যান শিলংয়ে এবং সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা— এসব কারণে ঢাকায় ফিরে আসেন লতিফুর রহমান। এসেই পাটের ব্যবসায় ঢুকে যান। তার বাবা তখন চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। সেখানে ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন লতিফুর রহমান। তখন তার সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন।

লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম গ্রুপের উৎপত্তি হয়েছিল চা চাষের মাধ্যমে, এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান এটি; যার রয়েছে ১৬টি কোম্পানি। ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এ গ্রুপে। এখন এই গ্রুপের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি।

লতিফুর রহমান নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতিও ছিলেন।

ব্যবসায় নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তিনি বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসাখাতে স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে বুধবার (১ জুলাই) সকালে মারা যান ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাড়িতেই থাকতেন।
পি