খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারি: ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলসি না খুললে চালের বরাদ্দপত্র বাতিল
নির্দিষ্ট শর্ত মোতাবেক চাল আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলসি খুলতে হবে। অন্যথায় সেই সেই বরাদ্দ বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আমদানিকারকদেরকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
বাজারে সরবরাহ বাড়াতে গত ১০ জানুয়ারির পর বিভিন্ন ধাপে আমদানিকারকদের চাল আমদানির অনুমোদন দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। অনুমোদন পাওয়া ৩২০ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বন্দর হয়ে ভারত থেকে কিছু চাল দেশে এসেছে। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দপত্রের অনুমোদনে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, বরাদ্দপত্র ইস্যুর ৭ দিনের মধ্যে এলসি খুলে এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। ৫ হাজার টন বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদেরকে এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যে সব চাল দেশে এনে বাজারজাত করতে হবে। আর ১০ থেকে ১৫ হাজার টন বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদেরকে এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে সব চাল দেশে এনে বাজারজাত করতে হবে। পরবর্তীতে এলসি খোলার সময়সীমা বাড়িয়ে গড়ে ৩১ জানুয়ারি করা হয়। তৃতীয় দফায় আবারও এলসি খোলার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ফেব্রুয়ারি করা হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে আর কেউ এলসি খুলতে পারবে না। যারা ১৫ তারিখের মধ্যে এলসি খুলতে পারবে না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে। দেশের ভোমরা, হিলি, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধা, শেওলা, সোনা মসজিদসহ যেসব স্থল বন্দর দিয়ে চাল দেশে প্রবেশ করছে; সে সব বন্দরে শত শত চালের ট্রাক অপেক্ষমান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা বৈঠকে জানান। অপেক্ষমান এসব চালের ট্রাক যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সীমান্ত দিয়ে দেশে আসতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের অনুরোধ করেন খাদ্যমন্ত্রী। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে আতপ চালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বেসরকারি পর্যায়ে আতপ চাল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে নন-বাসমতি মোটা আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করা দরকার। সীমান্ত দিয়ে চালের ট্রাক প্রবেশে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং চাল আমদানিতে অন্যান্য যেসব অসুবিধা আছে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সঞ্চালনায় এ সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নন-বাসমতি মোটা আতপ চাল আমদানির অনুমতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে একত্রে প্রস্তাব পাঠাতে বলেন। এছাড়া বর্তমান চালের মজুদ পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সংগ্রহের প্রবণতা, চালের আমদানির পরিমাণ, চালের বাজার মূল্য, ওএমএস খাতে বরাদ্দ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩টি জেলার (খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, যশোর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, সিলেট, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা) ডিসি ও আমদানিকারকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
কেএফ
মন্তব্য করুন