• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি : ব্যাসেল-৩ এর ভূমিকা

ড. মোহাম্মদ গোলাম  মোস্তফা

  ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৪৭
ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি: ব্যাসেল-৩ এর ভূমিকা

ভূমিকা : ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ করা, ঋণ দেওয়া, ঋণ বা বিনিয়োগ ও অর্থ সৃষ্টি করা। আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংক যে কোন দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। ব্যাংক বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের উৎপাদন ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। ঋণ বা বিনিয়োগের সেই টাকা বিনিয়োগ গ্রাহকগণ অনেক সময় যথাসময়ে পরিশোধ করেন না। ফলশ্রুতিতে ঋণ বা বিনিয়োগ খেলাপি হয়ে যায়। গ্রাহকের আমানত সমূহ সংরক্ষণ করা ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য। যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনগণের আমানত সমূহের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ধরণের সঞ্চিতি তহবিল সংরক্ষণরে মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হল নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন। মূলত খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করায় একদিকে যেমন ব্যাংকের আয় কমে যায়, অপরদিকে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান শক্তিশালী হয়। সুতরাং ব্যাংকের আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী করার জন্যই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ:

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম আর সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া। খেলাপি ঋণ বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো মালিকপক্ষের কর্তৃত্ব। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অসমপ্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম সংগঠিত হওয়ার ফলে যে ঋণ খেলাপি সৃষ্টি হয়েছে তার যথাযথ প্রমাণ থাকার পড়ও উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ব্যাসেল আদর্শ অনুযায়ী ঋণ/বিনিয়োগ সঠিকভাবে না দেওয়ায় ব্যাংকখাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হচ্ছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর তুলনায় প্রচলিত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ হলো সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা। সুদ খেলাপি ঋণ তৈরি করে দেয়। ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদানের নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ না করাও অন্যতম কারণ। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোট টাকা।

খেলাপি ঋণের শ্রেণি বিভাগ:

খেলাপি ঋণের মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে নন-পারফর্মিং ঋণের শ্রেণি বিভাগ সাধারণত তিন ধরণের হয়, যথা-সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা নি¤œমান (তিন মাসের বেশি অনাদায়ী), ডাউটফুল বা সন্দেহজনক (ছয় মাসের বেশি অনাদায়ী) এবং ব্যাড ডেট বা কুঋণ (ক্ষেত্র বিশেষ নয় মাস বা এক বছরের বেশি অনাদায়ী)। এর মধ্যে ডাউটফুল এবং ব্যাড ডেট ঋণগুলোকে খেলাপি ঋণের মধ্যে গণনা করা হয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে ঋণ শ্রেণীবিন্যাস করণের একটি নতুন পদ্ধতি এবং সম্ভাব্য অনাদায়ী ও লোকসানি ঋণসমূহের ওপর ব্যাংকগুলির অর্জিত মুনাফা থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের নিয়ম চালু করা হয়। তদনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ সমূহের প্রাথমিক শ্রেণীবিন্যাসকরণ ও এইগুলি থেকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ এর কাজ ৩১ আগস্ট ১৯৯০ এর মধ্যে সম্পন্ন হয়। ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং নিয়ে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ।

প্রভিশন কি?

প্রভিশন হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করা। আমানতকারীদের অর্থ যথাসময়ে ফেরত দেয়ার সক্ষমতা রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কোম্পানি আইনেও নানা বিধি-বিধান আরোপ করা হয়েছে। যেমন বিনিয়োগকৃত অর্থ কোন কারণে খেলাপি হয়ে গেলে খেলাপি ঋণের ধরণ অনুযায়ী দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ প্রভিশন হিসেবে ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করতে হয়। যার ফলে ব্যাংক সব ধরণের ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রভিশন হলো ব্যাংকের একটি অন্যতম সূচক এবং আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের একটি কার্যক্রম যেখানে লাভের কিছু অংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখা হয়। ঋণ-বিনিয়োগ প্রদানের ফলে যে অংশটুকু অনাদায়ী হয়ে যায় এবং আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিশ্চিত হওয়া যায় না, ফলে সম্ভাব্য ক্ষতির সৃষ্টি হয়। উক্ত সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় খেলাপি ঋণের মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় যে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা হয় তাকে প্রভিশন বলে। ১৯৯৮ সালের আন্তর্জাতিক হিসাব মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইএএসবি) প্রভিশনের জন্য হিসাব মান প্রকাশ করে যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র ১৯৯৯ সাল হতে অনুসরণ করে আসছে।

প্রভিশন সংরক্ষণের হার:

বাধ্যতামূলকভাবে সব ধরণের ঋণের বা বিনিয়োগের ওপর সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণের পর ব্যাংককে রিজার্ভ তহবিলে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডাদের মাঝে বণ্টন করা হয়, বাকি অংশ রিটেন আর্নিং হিসাবে ব্যাংক সংরক্ষণ করে। মূলত ব্যাংকের আর্থিক কাঠামোর ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্যই সব ধরণের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ঋণ নিয়মিত থাকলে জেনারেল প্রভিশন ১ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হয়। আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয় নির্ধারিত হারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। এর মধ্যে এসএমই ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হয়। সাব-স্ট্যান্ডাড বা নিম্নমান ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং ব্যাড ডেট বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়।

প্রভিশন ঘাটতি:

খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। করোনা মহামারি সময়ে দেশের আর্থিক কাঠামো ও ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একের পর এক সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বিভিন্ন ছাড়ের পরও দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের বা বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯টি যার পরিমাণ ২২ হাজার ৫৭৩ কোট টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ১১টি ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ঘাটতি হলো ১০ ৪৯১ কোট টাকা। প্রায় ৫০টি ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হলো ১৪ হাজার ৭ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ”রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্স” নীতিমালার ভিত্তিতে ছাড় দেয়, ফলে তাঁরা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারে।

ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির প্রভাব:

কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিদেশী ব্যবসায়ীরা সাধারণত ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি ও খেলাপ ঋণ পর্যবেক্ষণ করে। শ্রেণিকৃত ঋণের সঙ্গে প্রভিশন ঘাটতির বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। যখন কোন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকে তখন সেই ব্যাংক কোনো নতুন শাখা খুলতে পারে না; ক্যামেল রেটিং খারাপ হয়; ব্যাংকের তহবিল ব্যয় (কষ্ট অব ফান্ড) বেড়ে যায়; পুজিঁবাজারে ব্যাংকের শেয়ার মূল্য কমে যায়; বৈদেশিক বাণিজ্য করার জন্য শাখা খোলার অনুমোদন পায় না; ব্যাংকের রিটেন আর্নিং ও শেয়ার প্রতি আয় কমে যায়; এবং মূলধন ঘাটতিতে টান পড়ে। আর মূলধন ঘাটতিতে টান পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ওই ব্যাংক বছর শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। প্রভিশন ঘাটতি সমন্বয় করতে না পারলে বছর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে, সেই সাথে কমে যাবে ব্যাংকের মুনাফা।

অর্থ সংকটের কারণে ঋণ খেলাপির বিপরীতে মান অনুযায়ী প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে পারছে না অনেক ব্যাংক। প্রভিশন ঘাটতির কারণে শুধু যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকই বিপদে আছে তা নয়, আমানতকারীগণ ও শেয়ারমালিকগণও বিপদে পড়ে। অপর দিকে প্রতিযোগিতামূলক মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সক্ষমতা অর্জনের জন্য ব্যাসেল-৩ আদর্শ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের গ্রহণ যোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়। এতে সামগ্রিক ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। প্রভিশন সংরক্ষণ করার কারণে ব্যাংকের আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অলস অর্থ হিসেবে পড়ে থাকে প্রভিশন রিজার্ভ হিসেবে, যা ব্যাংক ভোগ বা খরচ করতে পারে না, লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারে না, নিতে পারে না রিটেন আর্নিং হিসেবে মূলধন খাতে বা বিতরণ করতে পারে না ঋণ হিসেবে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো ব্যাংককে টানা দুই বছর প্রভিশন ঘাটতি থাকলে তার বড় অংকের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে।

অবলোপন:

অবলোপন হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের জন্য ঝুঁকি। মন্দ ঋণ ব্যালেন্সশিট থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন বা রাইট-অফ বলে। মন্দ ঋণ ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট হতে বাদ দেওয়ার জন্য প্রথম ২০০৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২ “পলিসি ফর লোন রাইট-অফ” জারি করে। উক্ত সার্কুলারের নিয়মানুযায়ী যে সব মন্দ ঋণ পাঁচ বছরেও আদায় করা যায় না, সে গুলো শর্ত সাপেক্ষে অবলোপন করা যায়। রাইট-অফ বা অবলোপন করা মানে ব্যাংকের মূল ব্যালেন্সশিট হতে বাদ দিয়ে আলাদা আরেকটি লেজারে হিসাব সংরক্ষণ করা। অবলোপন সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা কেন্দ্রীয়ব্যাংক ২০১৯ সালের ০৬ ফেব্রুয়ারি জারি করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী অবলোপনের মেয়াদ ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মন্দ ঋণ মামলা না করেই ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন তা বাড়িয়ে ২০১৯ সাল থেকে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ অনলোপনের আগে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করতে হয়। ২০২০ সালে অবলোপনের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্সশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যা ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সম্প্রতি বিআইবিএম কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঋণ অবলোপনের পরিমাণ ছিল ১৭৪০০ কোটি যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৮৭০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকিং খাতে দিন দিন ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলশ্রুতিতে ঋণ অবলোপণের পরিমাণ বেড়েই চলছে।

ব্যাসেল-৩ এর ভূমিকা:

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, প্রভিশন ঘাটটি দূর করা যায় দু’ভাবে, খেলাপি ঋণের মানের উন্নয়ন করে এবং সব ঋণের বিপরীতে যোগ্য জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ব্যাসেল-৩ নীতিমালা পরিপালন করলে উক্ত দুটি শর্ত পূরণ হয়, ফলে প্রভিশন ঘাটতি দূর হয়। ব্যাসেল-৩ হচ্ছে ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ঝুঁকি নিরসনে একটি বৈশ্বিক স্বেচ্ছাসেবী নিয়ন্ত্রক কাঠামো। বিশ্বের সব দেশের ব্যাংকই এর নিয়মকানুন অনুসরণ করে থাকে। ঋণ খেলাপির কারণে ব্যাংকের যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয় তার মোকাবেলায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয় আর এ প্রভিশন রাখতে হয় ব্যাংকের আয় হতে। যদি মুনাফার তুলনায় প্রভিশনের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি সংরক্ষণের জন্য ব্যাসেল কমিটি প্রণয়ন করেছে ব্যাসেল আদর্শ। ব্যাসেল আদর্শ ক্রেডিট বা ঋণ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করা। ব্যাসেল-৩ তে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় ন্যূনতম মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫০ শতাংশ। মূলত: প্রভিশন ঘাটতি সংরক্ষণের জন্যই ব্যাসেল আদর্শ প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে তুলে ধরার জন্য ব্যাসেল আদর্শ পরিপালন অপরিহার্য। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পাদনের জন্য যে সকল ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে সে সকল ব্যাংকগুলোতে ব্যাসেল আদর্শ সঠিকভাবে পরিপালনের মাধ্যমে মূলধন ঘাটতি হ্রাস ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অপরিহার্য। খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে ঋণ আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংক খাতকে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

ব্যাংকার

drmdgulammustafa@gmail.com

মন্তব্য করুন

daraz
  • ব্যাংক-বীমা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh