• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ভুয়া শিরোনামে উত্তরা ফিন্যান্সে বিপুল অর্থ উত্তোলন করেছেন পরিচালকরা

আরটিভি নিউজ

  ১১ জানুয়ারি ২০২১, ২৩:১৯
director, Uttara, Finance, raised, huge, amount, money, under, false, heading
ভুয়া শিরোনামে উত্তরা ফিন্যান্সে বিপুল অর্থ উত্তোলন করেছেন পরিচালকরা

উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে চলছে নয়ছয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে অবৈধ লেনদেন, অনুমোদন ছাড়া শেয়ারবাজারে অর্থ বিনিয়োগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কয়েকজন পরিচালক নিয়ম ভেঙে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আমানত এবং ঋণের তথ্য আড়াল করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে গোপনে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভুয়া শিরোনামে উত্তরা ফিন্যান্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য পেয়েছে।

জানা গেছে, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিগত ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ওপর পরিদর্শনে নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল তদন্ত চালাতে গেলে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা থাকায় তথ্য দিতেও গড়িমসি করে উত্তরা ফিন্যান্স। ফলে প্রতিষ্ঠানটির মাত্র এক বছরের আর্থিক বিবরণী পরিদর্শনে তিন মাসেরও বেশি সময় লাগে। পরিদর্শনে উত্তরা ফিন্যান্সের অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে এলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন আটকাতে একটি প্রভাবশালী গ্রুপের মাধ্যমে চেষ্টাও চালানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপে তা আর সম্ভব হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের লেজার ব্যালেন্সে ৩ হাজার ৮০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা রয়েছে। অথচ ব্যাংকটির বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা লিজ অর্থায়ন বা ঋণের তথ্য আছে। আবার এক হাজার ৮৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত দেখানো হয়েছে আর্থিক বিবরণীতে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার ৬০৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মেয়াদি আমানতের তথ্য পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে, উত্তরা ফিন্যান্সের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে মার্জিন ঋণ ও মার্চেন্ট ব্যাংকিং ইউনিটকে ৫৯৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেখানো হলেও গ্রাহকভিত্তিক শ্রেণিকৃত ঋণের বিবরণীতে নেই। এছাড়া উত্তরা মোটরস ও উত্তরা গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ১১৮টি অনুমোদনহীন উত্তোলনের মাধ্যমে ৩৩৬ কোটি ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির কোনও বিবরণীতে এই ঋণের তথ্য নেই। ২০২০ সালেও ভুয়া শিরোনামে এ ধরনের ভুয়া ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত অধিকাংশ চেকেই স্বাক্ষর করেছেন কোম্পানির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিল চন্দ্র দাস। তিনি নিয়মিত চাকরি থেকে ২০১১ সালের ১৯ জুন অবসরে গেলে তার চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। তবে এর স্বপক্ষে পর্ষদ সভার কোনো রেজুলেশন পাওয়া যায়নি। এরপর এমডি শামসুল আরেফীনের একটি তারিখবিহীন অফিস নোটে অনিল চন্দ্রের চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। পর্ষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসান দুই বছর অনুমোদন করেন। পরে এমডি আবার তার চাকরির মেয়াদ ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করেন। এরপর আর তার চাকরির মেয়াদ না বাড়ালেও তিনি নিয়মিত কর্মকর্তাদের মতো সব কিছুতে স্বাক্ষর করছেন।

এসব বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শনে নেমেছে এটি নিঃসন্দেহ ভাল উদ্যোগ। এমন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত বিবরণী সন্দিহান হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিদর্শনে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডির গাড়ি, বাড়ি, বিদেশ ভ্রমণে ২৪ কোটি টাকা তুলেছেন। যা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ নেই।

উত্তরা ফিন্যান্সের বক্তব্য: কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিদর্শক দলের কাছে এসব অনিয়মের দায়ভার চাপানো হয়েছে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) উত্তম কুমারের ওপর, যিনি সম্প্রতি মারা গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃত সত্য আড়াল করতে সব অনিয়মের দায়ভার মৃত উত্তম কুমারের ওপর চাপানো হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ আরটিভি নিউজকে বলেন, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডসহ দেশের অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নাজুক অবস্থা। এসব বিষয়ে আমরা যারা আলোচনা করছি, এতে লাভ হচ্ছে না। যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার দরকার তারা এসব আলোচনা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেন না।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • ব্যাংক-বীমা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিয়ে করেছেন রিয়েলিটি সিরিজে খ্যাতিমান মার্কিন সংযুক্ত যমজ অ্যাবি হেনসেল
কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট ভুটানের রাজা
‘ইসরায়েলি ভাস্করের পুরস্কার নিয়ে গণহত্যাকে সমর্থন করেছেন ড. ইউনূস’
ড. ইউনূসের গোমর ফাঁস করেছিলেন বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান
X
Fresh