• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরতদের তিন কোটির টাকা জরুরি সহায়তা ব্র্যাকের

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৮ জুন ২০২০, ২০:০৫
BRAC provided emergency assistance of Rs 3 crore to the foreign returnees affected by the Corona
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন

করোনাভাইরাস (কোভিড 19) মহামারীর এই সংকটময় সময়ে চাকরি হারিয়ে বা অসহায় হয়ে দেশে ফেরত আসা ৭ হাজার ২৫০ জন অভিবাসী কর্মীকে জরুরি সহায়তা হিসেবে নগদ তিন কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ব্র্যাক।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে ভার্চুয়াল একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং স্থানীয়ভাবে ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দিয়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে নগদ এই অর্থ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্র্র্যাক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এক হাজার ৫৪৫ জন বিদেশফেরত কর্মীর কাছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি পাঁচ হাজার ৭০৫ জনের যাচাইবাছাই চলছে। তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরুরি এই অর্থ-সহায়তা পাবেন।
মূলত ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়ন, রয়েল ড্যানিশ দূতাবাস, সুইস অ্যাজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম-ব্র্যাকের যৌথভাবে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্প, চিলড্রেন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ফাউন্ডেশন (সিফ) এবং ব্র্যাক ইউকে-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নগদ এই অর্থ প্রদান করা হচ্ছে।
মূলত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ফিরেছেন তারা এই সহায়তা পাচ্ছেন। ব্র্যাক জানিয়েছে, শুধু জরুরি সহায়তা নয়, ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়ন ও দাতাদের সহায়তায় বিদেশ ফেরতের সামাজিক সেবা, দক্ষতা তৈরি, অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণের জন্য আগামী তিন বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিকিল্পিতভাবে খরচের পরিকল্পনা রয়েছে।
কোভিড-19 এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরতদের জরুরি সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই মুহূর্তে দরকার দৃশ্যমান কোনো সহায়তা যা সরাসরি কাজে লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্র্যাক এই যে, তিন কোটি টাকা নগদ অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে সেটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের সবাইকে এভাবে দাঁড়াতে হবে। সরকার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিদেশ ফেরতদের দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বায়রাসহ অন্যান্য দাতা ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে প্রবাসী কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সবাই মিলে এগিয়ে এলে বর্তমান সংকট কাটিয়ে সবার জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকার ড্যানিশ দূতাবসের ডেপুটি চিফ অব মিশন রেফিকা হেইতা কোপেনহেগেন থেকে যুক্ত হয়ে বলেন, কোভিড 19 এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেন। ব্র্যাক তখন জরুরি পরিস্থিতিতে বিদেশ ফেরতদের সহায়তা করার জন্য আমাদের প্রস্তাব দেয়। এমন বিরুপ পরিস্থিতিতেও যে মানবিকভাবে সবার পাশে দাঁড়ানোর কৌশল বের করা যায় সেটি কিন্তু ব্র্যাক করে দেখাল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদ। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশ যখনই কোনো দুর্যোগে পতিত হয়েছে, ব্র্যাক সামনের সারিতে থেকে সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-19) বাংলাদেশে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে ব্র্যাক সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে তা মোকাবেলায় কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশ ফেরতদের পাশে দাঁড়ানোর এই উদ্যোগ। ‘আমরা প্রবাসীদের সহায়তা দিচ্ছি বলবো না। দেশের প্রতি তাদের অবদানের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাদের পক্ষ থেকে এই ছোটো উপহার।’
অনুষ্ঠনটি সঞ্চালনা ও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। ব্র্যাকের কোভিড 19 এর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য টেকসই পুনরেকত্রীকরণের জন্য প্রোগ্রামের উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ ফেরতদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তারা বিভিন্ন সংকটে রয়েছেন। অনেকেরই পরিবার চালানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। তবে শুধু ৭২৫০ জন অভিবাসী কর্মীকে নগদ তিন কোটি টাকা আমরা আমাদের কাজ শেষ করতে চাই না। আমরা ইতোমধ্যেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ২ হাজার ৫০০ বিদেশ ফেরত কর্মী ও তাদের পরিবারকে মনোসামাজিক সহায়তা দিয়েছি। করোনা পরবর্তী সময়ে বিদেশ ফেরত কর্মীরা কীভাবে সচ্ছল হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য আমাদের আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা মনে করি এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কাজটি শুধু সরকারের একার নয়, সবাইকে মিলে কাজটি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের টাঙ্গাইল জেলা রিইন্টিগ্রেশন সেন্টার (ডিআরএসসি) থেকে যুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুর ফেরত কর্মী রাশেদুল হাসান রুমী বলেন, ‘আমি সিংগাপুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। কোম্পানির সঙ্গে আরো ২ বছরের চুক্তি ছিল। কোভিড -19 মহামারীর কারণে কোম্পানির কাজ কমে আসে। তাই কোম্পানি ছুটি কাটানোর ঘোষণা দিয়ে আমাকে দেশে ফেরত পাঠায়। এখন পুরোপুরি বেকার। প্রায় ৫ লাখ টাকা দেনা রয়েছে। পরিবারের ৪ জন সদস্য আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল।’।
সিরাজগঞ্জ থেকে শওকত হোসেন যুক্ত হয়ে জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিলে চার লাখ টাকা খরচ করে ব্রুনাই যান। চীনের নাগরিকদের সঙ্গে কাজ করতেন। করোনা ভাইরাসের কারণে 19 ফেব্রুয়ারি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন আর্থিক অনটনের মধ্যে আছেন।
নরসিংদীর হোসেন মিয়া জানান, ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। ২০২০ সালের ৭মার্চ ছুটিতে দেশে চলে আসতে বাধ্য হন।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, অভিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ব্র্যাক সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। করোনার এই সময়েও সবার আগে তারা উদাহরণ তৈরি করলো। আমরাও ভাবছি কী করা যায়। সবাই মিলে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন :

সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দেবে ব্র্যাক, রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা
চাকরির সুযোগ দিচ্ছে ব্র্যাক, নেবে একাধিক
বাইসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে ব্র্যাককর্মীর মৃত্যু
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
X
Fresh