• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ফাগুন-ভালোবাসার ছোঁয়া ফুল বাজারে

মিথুন চৌধুরী

  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:০১

নয়নভরা জল গো তোমার আঁচলভরা ফুল

ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল।।

ফুল যদি নিই তোমার হাতে

জল রবে গো নয়ন পাতে

অশ্রু নিলে ফুটবে না আর প্রেমের মুকুল।।

ঋতুরাজ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতোই না আয়োজন, যার মূল অনুষঙ্গ রঙ-বেরঙের ফুল। এর নাম শুনলেই যেনো আনন্দে নেচে ওঠে মন, নির্মল হয়ে যায় হৃদয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপহারও যেনো এটি। নানা রঙের ফুলের আবির আর মোহ মোহ গন্ধ কেড়ে নেয় বিষাদ। ভালোবাসার প্লাবনে ভাসিয়ে দেয় মন।

সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বহি:প্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল। আসছে বিশেষ তিনটি দিবস। যার পরতে পরতে স্থান পাবে ফুলের বিস্তার। বসন্ত আর ভালোবাসার আকুতিতে যেমন ছড়াবে সৌরভ, তেমনি ভাষা দিবসে শ্রদ্ধার অশ্রুকে ঢেকে দেবে ফুল। আর দিবসগুলোর মূল অনুষঙ্গ ফুল নিয়ে ব্যস্ততার যেনো শেষ নেয় ফুল বিক্রেতাদের।

রাজধানীর ফুলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ততায় কথা বলার জো নেই বিক্রেতাদের। থরে থরে সাজানো হয়েছে ফুল।দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। পাইকার আর ফুল চাষীদের সঙ্গে অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত তারা। ফুল দরকার ফুল। উজ্জল রঙের তাজা ফুল। ক্রেতাদের মন রাঙাতে ফুলের বাইরে নানা আকার ও রঙের ঝুড়ি, সোলা, র‌্যাপিং কাগজ, সিরামিক বাটি, পাতা সংরক্ষণ করে রাখছেন তারা।

বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বিবেচনা করে বেশি সংগ্রহ ও অর্ডার দিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। আর ভাষা দিবস মাথায় রেখে আগাম চাহিদার কথা পাইকার ও চাষীদের বলে রেখেছেন দোকানিরা। এমনটাই জানালেন শাহাবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা।

দিবসগুলোকে ঘিরে এরই মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও, গাবতলী, গুলশান, বাড্ডা, মালিবাগ, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী ও ধানমণ্ডিসহ ২০টি পয়েন্টে ফুল বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে শাহবাগ ও কাঁটাবনেই মূলত ফুলপ্রেমীরা বেশি ভিড় করেন।

এখানে মিলবে গাঁদার মালা ১০-৫০ টাকা, ভিন্ন রঙের দেশি-বিদেশি গোলাপ ১০-২০ টাকা, রজনীগন্ধা ৫-১৫ টাকা, অর্কিড ফুল ২০০ টাকা, বেলি ৮-১৫ টাকা, গন্ধরাজ ১০-২০ টাকা, জারবেরার মালা ১০ টাকা, গাঁজরার মালা ১০ টাকা, গ্লারিডিলাক্স ১০-৩০ টাকা।

এছাড়া চেরি, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যাবে দোকানগুলোতে।তবে দিবসগুলোকে ঘিরে ফুলের দাম বাড়তিতে কেনেন বিক্রেতারা। তাই বিক্রিও করেন বেশি দামে।

ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাজধানীর উত্তরা থেকে ফুল কিনতে এসেছিলেন শামিম হোসেন। মৌসুমী এ ফুল বিক্রেতা বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎসবে ফুল কিনে বিক্রি করি। এবারো রজনীগন্ধা ও কিছু গোলাপ কিনেছি।

দিবসগুলোকে ঘিরে অন্য দিনের তুলনায় ৫ গুণ বেশি কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন আরেক বিক্রেতা সুজন আনোয়ার।

ভালোবাসা দিবসে বড় ভাইয়ের বিয়ে ধানমন্ডি থেকে আসা অরণ্যের। বসন্তের প্রথম দিন গায়ে হলুদ। তাই ফুল কিনতে এসেছেন তিনি। দর-দাম যাচাই করে বিভিন্ন পাইকারি দোকান ঘুরে জিপসি, গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদা কিনেছেন।দাম তুলনামূলক বেশি হলেও কেনা ছাড়া উপায়ও নেই বলেও জানালেন তিনি।

পাইকারি বাজারের পাশাপাশি শাহবাগের খুচরা দোকানগুলোতেও চলছে বেচাকেনা, অর্ডারের কাজ ও ফুলের তোড়া বিক্রির প্রস্তুতি।

বসন্তে মেয়েরা ফুলের রিং মাথায় পরে ঘুরে বেড়ায়। তাই দোকানগুলোতে কয়েক প্রকার ফুলের রিং তৈরি হচ্ছে। দোকানগুলোতে মালাও তৈরি করতে দেখা গেছে। মূলত অনেকে গয়না হিসেবে ফুলকে বেছে নেয়। কানে দুল, গলায় মালা, মাথায় প্রিন্সেস ব্যান্ড বা হাতে মালা পেঁচিয়ে নেয় তারা। চুলের একপাশে ক্লিপ দিয়ে তাজা ফুলও গুঁজে।

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী জাহিদ আনোয়ার বলেন, ফুলের ব্যবসা সাধারণত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার হয়ে থাকে। তবে বিশেষ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, নববর্ষে বেশি বিক্রি হয়। ওই দিনগুলোতে বেশি বিক্রি হলেও ভালোবাসা ও বসন্ত দিবসে এ ব্যবসায় লাভ অধিক।

ভালোবাসা দিবসে বেশি বিক্রি হয় গোলাপ ফুল। সারাদেশে কয়েক প্রকার গোলাপ থাকলেও লিংকন গোলাপের চাহিদা বেশি। বিশেষ দিনের জন্য আমরা সাধারণত হাইব্রিড গোলাপ ব্যবহার করে থাকি। গোলাপের দামও চড়া থাকে। সাধারণ দিনে একটি গোলাপ ৫ টাকায় বিক্রি হলেও পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে তা হয় ২০ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত। বসন্তে চাহিদা থাকে গাঁদা ফুলের। মালা, মাথার রিং ও ফুলের গহনার চাহিদা থাকে বসন্তে। ভাষা আন্দোলনের জন্য ফুলের ডালা তৈরিতে ফুলের বেশ চাহিদা বাড়ে। আর দিনটিকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা পূরণে আগে থেকে চাষীদের অর্ডার দিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh