• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গুডবাই শেরেবাংলা নগর

মিথুন চৌধুরী

  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪১

বসন্ত সে যায় যে হেসে, যাবার কালে

শেষ কুসুমের পরশ রাখে বনের ভালে।।

তেমনি তুমি যাবে জানি,

সঙ্গে যাবে হাসিখানি-

অলক হতে পড়বে অশোক বিদায়-থালে।।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতার সুরের মতো হাসতে হাসতে বাণিজ্যমেলার ২২তম আসরের বিদায় সুর বাজছে। শনিবার কর্মচঞ্চলতার মধ্য দিয়ে পর্দা নামছে বাণিজ্যমেলার। আর এ বিদায়ের সঙ্গে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ২২টি আসরের স্মৃতিও বন্দি হয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যমেলার কথা মুখে আসতে কেউ আর শেরেবাংলা নগরের নাম নেবে না। বদলে যাবে স্থানের নামের সুর। কারণ, এবারই শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্যমেলার আয়োজনের শেষ আসর। ২০১৮ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৩তম আসর বসবে ঢাকার পূর্বাচলে। এজন্য সরকার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করছে।

শনিবার সকালে মেলার প্রধান ফটক খোলার আগে রাস্তাজুড়ে হাজারো মানুষের ঢল নামে। শিশু, প্রবীণ, নবীনদের কোলাহলে উৎসব বিরাজ করে। যা দিনব্যাপী চলবে।

মেলার সুরটা ৩১ জানুয়ারি বাজার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে ৪দিন বাড়ানো হয়। কিন্তু আজ সে সময়ও ফুরালো। তাই বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে সকাল থেকেই। ফলে সকাল থেকেই বিক্রেতাদেরও বেড়েছে পণ্য বিক্রির প্রতিযোগিতা। মেলার সময় ৪ দিন বাড়ানোয় বিক্রেতারাও খুশি। তারা আনন্দ নিয়ে ব্যবসা করছে। তাছাড়া সব পণ্যের ওপর ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ায় ক্রেতারাও খুশি।

এবার শৈত্যপ্রবাহ না থাকায় প্রচুর পরিমাণে আইসক্রিম খেয়েছেন মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। বিক্রিও বেড়েছে। বড় স্টলগুলোর পাশাপাশি ছোট স্টলগুলোও ব্যবসার দিক থেকে ভালো অবস্থানে আছে।

মেলায় আসা উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক চৌধুরী নাহিদা ইসলাম উর্মি বলেন, এবারের মেলায় বেশ কেনাকাটা করেছি। পণ্যের মানও ভালো ছিল। মেলায় প্রায় ৪০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছি। এর মধ্যে দিল্লির অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য কেনা হয়েছে বেশি। দাম আগের দিন যা শুনেছি, তার থেকে কম নিয়েছে। বাসার জন্য রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ব্লেন্ডার কিনেছি।

মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন চৌধুরী দৌলত মোহাম্মদ জাফরি, মেলার প্রথম থেকেই পরিবারের সবাই আসার আবদার করছে। তাদের আবদার পূরণ করতে এবং বাসার জন্য কিছু সামগ্রী কিনতে মেলায় এসেছি।

ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ গৃহস্থালি পণ্যে। এছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালির পাশাপাশি প্রেসার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার, ওভেন, রাইস কুকারসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদাও রয়েছে। শেষ সময়ে এসব পণ্য ছাড়াও মোটামুটি সব পণ্যই রয়েছে নগদ ছাড়ের পাশাপাশি বিভিন্ন উপহার। এছাড়া গহনার স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় লেগেই ছিল। স্টলগুলোতে বাহারি ডিজাইনের গহনা কিনতে ভিড় করছেন তরুণীরাও। মেলার প্রথম দিকে আসা মানুষের অধিকাংশ দর্শনার্থী হলেও শেষ সময়ে এসে ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়ে গেছে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের কর্মকর্তাদের কর্মচাঞ্চল্য। ইলেকট্রনিক্স পণ্য, রান্নার সামগ্রী ও পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় বেশ লক্ষণীয়।

মেলায় এবার ভালো ব্যবসা করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্টলভেদে গেলোবারের তুলনায় এবার বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বিক্রি বেশি হওয়ায় তাই ব্যবসায়ীরা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। তা ছাড়া মেলার সময় ৪ দিন বাড়ানোকেও ইতিবাচক বলছেন তারা।

বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব রেজাউল করিম জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার মেলায় ব্যবসা ভালো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সন্তোষজনক অবস্থানে আছেন। মেলায় লোকসমাগম অনেক বেশি। ক্রেতারা প্রচুর কেনাকাটা করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবারো নতুন বছরের ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন।

বাণিজ্যমেলায় ২০১০ সালে ২২ কোটি ৮৬ লাখ, ২০১১ সালে ২৫ কোটি, ২০১২ সালে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ, ২০১৩ সালে ১৫৭ কোটি, ২০১৪ সালে ৮০ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৮৫ কোটি, ২০১৬ সালে ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায়। এছাড়া ২০১৫ সালে ২০তম বাণিজ্যমেলায় পণ্য বিক্রি হয়েছিল ৫০ কোটি টাকার। ২০১৬ সালে পণ্য বিক্রি দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২১ কোটি টাকায়। এবার তার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আয়োজকরা জানান।

তবে ২২তম বাণিজ্য মেলায় এবার প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ হয়েছে। যার অধিকাংশই নারী শিক্ষার্থী। আর যারা খণ্ডকালীন চাকরিতে ভালো করেছেন তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।

এবার মেলায় ২১টি দেশ অংশ নেয়। গেলো মেলার চেয়ে এবারের মেলায় ৭টি স্টল বেশি ছিল। এবার সব ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, সাধারণ স্টল, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নসহ ৫৬০টি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নেয়। যা ২০১৬ সালে ছিল ৫৩৬টি।

২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। যা গেলো বছর ছিল ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে অনুসারে, রপ্তানি আদেশ বেড়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। এছাড়া মেলায় ১১৩ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়েছে। যা গেলো বছর ছিল ১২১ কোটি টাকা। সে মোতাবেক এবার বিক্রি কমেছে ৮ কোটি টাকা।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh