দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৪৩২ ডলার, বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক

বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪৩২ ডলার বা ৩৭ হাজার ৫৮৪ টাকা। যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় কম রয়েছে।

সোমবার (৯ মে) নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কনভেনর ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। এই সময় তিনি বলেন, এখন দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩২ ডলারে। প্রতিবছর আরও ১০ বিলিয়ন ডলার করে ঋণ বাড়ছে। ০.৭ বিলিয়ন ডলার করে প্রতিবছর ঋণ পরিশোধ করতে ব্যয় করতে হচ্ছে। ঋণ বৃদ্ধি হার অনেক বেশি হারে বাড়ছে।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশের সরকারি দায়দেনা শীর্ষক আলাপচারিতায় ভার্চুয়ালি আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে দায়দেনা দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় কম এতে সন্দেহ নেই। আইএমএফ এর সূত্রানুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়দেনা জিডিপির ৩৪.০৭ শতাংশ। আর ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়দেনা ১৩১.১৪ বিলিয়ন। গত তিন বছরে গড় হিসাবে দায়দেনা প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন করে বেড়ে গেছে। সার্বিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দায়দেনা বৃদ্ধি হার ছিল ৪৪.১ শতাংশ। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এটা বেড়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ হয়েছে। আমাদের দায়দেনা পরিস্থিতি চলমান দশকে দেড়গুণ বেড়ে গেছে।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধি হার খুবই বেশি। অভ্যন্তরীণ ঋণ ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে ঋণ বৃদ্ধি হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পরে এই বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৬০.১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ ১৬.৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪.৭ থেকে ১৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেবপ্রিয় বলেন, ঋণের সঙ্গে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিখাত বিদেশ থেকে টাকা নিয়েছে ১৮.৭ বিলিয়ন। এটা ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা জিডিপির ৫ শতাংশ। তারা যদি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে দেশের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে। এর সঙ্গে বাণিজ্যিক ঋণ বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ বহুপাক্ষিকের তুলনায় দ্বিপাক্ষিকভাবে বাড়ছে। এর সঙ্গে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে উচ্চ সুদের হারে। ঋণের সুদ পরিশোধের হিসাব করলে দেখা যায়, ২০০৬ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধ করা লাগত ৩৮.৯১ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ৬১.০৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের পর ঋণ বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এসে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়েছে ৬৭.৬৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩২.৩৫ শতাংশ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে।