• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ইভ্যালির ব্যবসা ব্যর্থ হলো যে কারণে

আরটিভি নিউজ ডেস্ক

  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪২
ফাইল ছবি

২০১৮ সালে মার্কেটে আসে ই-কমার্স ইভ্যালি। গ্রাহক ধরতে ইভ্যালিতে মোটরসাইকেল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, পোশাক, খাদ্য-পণ্যসহ প্রায় পণ্যতেই ব্যাপক ছাড়, আর লোভনীয় ক্যাশব্যাক অফার দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু নজরকাড়া অভিষেক হলেও শুরুর কিছুদিন পর থেকেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ ওঠে ইভ্যালির বিরুদ্ধে।

মাত্র তিন বছরে ইভ্যালির গ্রাহকের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এর মধ্যেই ধসে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ধসে পড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইভ্যালির ব্যবসায়িক মডেলের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন কোনও মডেল বিশ্বে দীর্ঘ মেয়াদে সফল হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলছেন, ইভ্যালি যেভাবে ব্যবসা করছিল তাকে অ্যাকাডেমিক ভাষায় পঞ্জি মডেল বলা হয়। এ মডেলে কম বিনিয়োগে অধিক মুনাফা লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কিছু মানুষকে ছাড়, পুরষ্কার বা লভ্যাংশ দিয়ে মানুষের লোভ বা আকাঙ্ক্ষাকে জিইয়ে রাখা হয়।

অধ্যাপক মুশতাক বলছেন, ধরুন চটকদার বিজ্ঞাপনে দেওয়া হলো এক লাখ টাকার মোটরসাইকেল পঞ্চাশ হাজার টাকায় দেব। যারা গ্রাহক তারা কিন্তু এটা চিন্তা করে না যে এক লাখ টাকার মোটরসাইকেল কেমন করে পঞ্চাশ হাজার টাকায় দিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রথমে এরকম আট দশজনকে দিলো, এটার একটা মাল্টিপ্লাইড এফেক্ট আছে। আমি এরকম একটা পেলে আরও দশজনকে বলবো, ওরাও অ্যাপ্লাই করবে। তো টাকার ইনফ্লোটা কিন্তু অনেক হবে। আর প্রতিষ্ঠান তো আগে অ্যাডভান্স নিয়ে নিয়েছে টাকা, অ্যাডভান্স নিয়ে এখন পাঁচ বা দশ শতাংশ লোককে সে ডেলিভারি দিচ্ছে। কিন্তু ম্যাক্সিমাম লোক ডেলিভারি পাচ্ছে না। এই টাকাগুলোই তারা বাজারে রিভলভ করছে।

তিনি বলেন, দশজনের খবর শুনে আরও একশো জন অ্যাপ্লাই করছে, তারাও টাকা অ্যাডভান্স করছে—এই টাকা দিয়েই কোম্পানি প্রোডাক্ট কেনে এবং ডেলিভারি দেয়।

এই অধ্যাপক মনে করেন, এটাই ইভ্যালির বিজনেস মডেল। তবে তিনি বলছেন, এটা সাস্টেইনেবল বা টেকসই কোনও মডেল না।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, যেকোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগ সফল করতে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি ও ধরে রাখা, এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখা- এই দুইটি বিষয় নিশ্চিত করতে না পারলে সে ব্যবসা ধসে পড়াটাই স্বাভাবিক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, ইভ্যালির ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নিয়মনীতির দৃশ্যমান ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, ই-কমার্স ব্যবসায় যেহেতু বিক্রেতা এবং গ্রাহকের সামনাসামনি দেখা হয় না, সে কারণে এখানে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থা এগুলোই মূল ভিত্তি।

তিনি বলেন, ইভ্যালি এবং এর মত দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা হচ্ছে, সাধারণত পণ্যের মান ঠিক রাখা, সময়মত ডেলিভারি দেয়া এবং আরেকটি বিষয় হচ্ছে পণ্য যদি পছন্দ না হয় বা ত্রুটি থাকে, তাহলে সেটি ফেরত দেয়া—সেগুলোর ব্যবস্থা থাকতে হয়।

তিনি বলেন, আরেকটি হচ্ছে টাকা দেয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দেয়া, সেটা প্রতিকারও থাকতে হবে। এগুলো ইভ্যালিতে দেখা যায়নি। ফলে ব্যবসার যে সাধারণ নীতিমালা ও জবাবদিহিতা জনিত নৈতিকতা সেগুলো এখানে মানা হচ্ছিল না।

সময়মত ইভ্যালিতে অর্ডার করা পণ্য না পেলে বা একেবারেই না পেলে গ্রাহক কোথায় অভিযোগ করবে তেমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু অ্যামাজনের মতো বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্ডার করা পণ্য সময় মত না পেলে, কবে আসবে সেটি জানানোর এবং অভিযোগ জানানোর জন্য কার্যকর যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে।

ব্যর্থতার ফলে গ্রাহক এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সরবরাহ দেয়া হবে উভয়ের কাছে ব্যাপক দেনা হয়েছে ইভ্যালির। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি হিসাব দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ৩১১ কোটি টাকা। আর মার্চেন্ট অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সরবারহ করার কথা তাদের কাছে দেনা ২০৫ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের দুইজন শীর্ষ নির্বাহী গ্রেপ্তার হওয়ায় গ্রাহক ও মার্চেন্টরা নিজেদের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখন ইভ্যালির দায়িত্ব নিতে না চাইলেও, মূলত তাদের উদাসীনতার সুযোগ নিয়েই এ ধরণের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটছে।

ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আহমদ বলছেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ হঠাৎ করে ওঠেনি, গত এক/দেড় বছর ধরেই নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি ঠিক সময়ে ব্যবসার ধরণ ও লেনদেনের পদ্ধতির দিকে নজর দিতো তাহলে অসঙ্গতির মাত্রা বড় হত না। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
টাকা ফিরে পেতে অপেক্ষা বাড়ছে ইভ্যালি গ্রাহকদের
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
X
Fresh