• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শেয়ারবাজার টানাপোড়েনের জন্য কোম্পানিগুলো দায়ী

মিথুন চৌধুরী

  ২৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৪২

দু-এক সপ্তাহে লেনদেন ভালো হলেও বেশির ভাগ সময়ই লেনদেন ও সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতায় থাকছে দেশের শেয়ারবাজার। তবে বাজারের এমন পরিস্থিতির জন্য কোম্পানিগুলোকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গেলো কয়েক বছর ধরে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের লাভের আশা দেখিয়ে শেয়ার কেনার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বছর শেষে এসব কোম্পানির শেয়ার উল্টো কমে আসছে।

তারা আরো বলছেন, অনেক কোম্পানি তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে লুকোচুরির ভাব নিচ্ছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয়(ইপিএস) ও প্রকৃত সম্পদমূল্য(এনএভি) নিয়ে প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রকাশ করছে না। এছাড়া অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড(অর্থ লভ্যাংশ)সঠিকভাবে বিনিয়োগকারীদের না দেয়ায় বিক্রি করে মার্কেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ফলে এর খারাপ প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। পাশাপাশি অনেকে গুজবে শেয়ার কিনে পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। এতে বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণও কমে আসছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে চলে যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা প্রচুর শেয়ার বিক্রি করছে সে অনুসারে বিনিয়োগকারী কম। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হচ্ছে কোম্পানির ডেভিডেন্ট কমে যাওয়ায়। করপোরেট নীতিমালা বেশির ভাগ কোম্পানিতে নেই। গেলো তিন বছর ধরে যেসব কোম্পানিগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে দাদের শেয়ারমূল্য প্রায় অর্ধেক দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর দুর্বলতা কারণে এ দর কমছে। কোম্পানিগুলো যদি শেয়ার বিক্রিতে উদ্যোগী হয়ে পড়ে তাহলে আস্থা থাকবে কোথায়? বেশির ভাগ কোম্পানি তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করছে না। তারা বিনিয়োগকারীদের কাছে যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, কোম্পানিগুলোকে সঠিক পথে আনতে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ করপোরেট গভার্নেন্স গাইডলাইন দিয়েছে তার ব্যবহার বাড়ানো। তাদের অফিস পরির্দশ করা। কোম্পানির বোর্ড সেক্রেটারি আছে কিনা দেখা। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন কিছু সময়ের জন্য উদ্যোক্তাদের অবাধে শেয়ার বিক্রিতে সীমাবদ্ধ আনলে বাজার উন্নতি হতে পারে। আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল হয়ে গেলে বাজার কিছুটা উন্নত হয়। বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান না দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিনিয়োগ করলে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডিএসই ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, গেলো সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৮৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আর আগের সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৪৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকার। এ হিসাবে গত সপ্তাহে আগের সপ্তাহ থেকে লেনদেন কমেছে ৫৪৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ০১ শতাংশ। লেনদেন কমার এ ধারাবাহিকতা কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। যেমন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৭৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার। গড়ে প্রতিদিন যা ছিল ৯৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ‘বি’ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ‘এন’ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে দশমিক ৯৬ শতাংশ। ‘জেড’ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে দশমিক ৮৮ শতাংশ।

এদিকে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৪২ পয়েন্ট। যা গেলো সপ্তাহে ছিল ৫ হাজার ৫২১ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ ৫ কার্যদিবসে এ সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ বা ১২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক কমেছে দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ১৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট। অপরদিকে শরিয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ বা ১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আর লেনদেন হয়নি ৩টি কোম্পানির শেয়ার। এদিকে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে গেইনার বা দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর পুরো সপ্তাহে এই কোম্পানির ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১৮৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। তবে সার্বিক সূচক বেড়েছে দশমিক ৩৭ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৭৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৮টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির।

এমসি/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh