• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

বন্যায় দুর্ভোগে নারীরা, আতংকে কাটে রাত (ভিডিও)

কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৫ জুলাই ২০২০, ২২:৪৮

দ্বিতীয় দফা বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষ। পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল নিয়ে রাস্তায় বা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। পাশাপাশি আশংকা এবং আতংক রয়েছে তাদের মাঝে। অনেক দূর থেকে কায়িক পরিশ্রম করে আনতে হচ্ছে পানি। রাতে নারীরা একান্ত কাজে হুটহাট করে বাইরে বের হতে পারছে না। কোনভাবে দিনটা কেটে গেলেও রাত নামলেই আশংকা আর আতংকেই কাটে এসব পরিবারদের।

গরু আর ছাগল যাতে চুরি না যায় এজন্য পাহারা বসানো হলেও কর্মহীন যুবক ও কিশোরদের নিয়ে একটা সংশয়ে রাত কেটে যায়। কিশোরী মেয়েদের কারণে দুরদূরান্ত থেকে অপরিচিত লোকের আনাগোনায় বাবা-মায়েরা বেশিরভাগ সন্তানদের আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে নেই।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কে অবস্থান নেয়া একটি পরিবারের মা জানান, আমার মেয়ে একটি সরকারি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এই সড়কে এক রাত ছিল। ছেলেপেলেদের উৎপাতে শহরে ওর খালার বাড়িতে পাঠিয়েছি। মেয়েটা ওখানে কেমন আছে জানতেও পারছি না।

তিনি আরও জানান, বন্যার সময় দুটো মোরগ আর তিনটে মুরগী নিয়ে এসেছিলাম। একটা খেয়েছি। পরদিন সকালে দেখি বাকীগুলো নেই। কে বা কারা দড়ি খুলে নিয়ে গেছে। পাশের শেডে কাল রাতে কে বা কারা দুটো শাড়ি চুরি করে নিয়ে গেছে।

এক মা জানালেন, সেয়ানা মেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখাই দুষ্কর। ঘুমন্ত কিশোরী মেয়েকে রেখে ত্রাণ আনতে গিয়েছিলেন বাবা ও মা। এসময় প্রতিবেশী এক বয়স্ক পুরুষ তার গায়ে হাত দিয়েছে। এমন নানান তিক্ততা আর আশংকায় থাকতে হয় তাদেরকে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, এ ব্যাপারে মৌখিক কিংবা লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে বানভাসিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে টানা দ্বিতীয় দফা বন্যায় ধরলার পানি কমলেও বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীয় পয়েন্টে ১০৩ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৬ এবং ধরলা নদীতে কমে গিয়ে ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার ফলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে চিলমারী উপজেলায়। এই তিন উপজেলায় নতুন করে আরও ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

চিলমারীর বড়চর, নটারকান্দি, ঢুষমারা, বজরা দিয়ারখাতা, বাতাসু কাঁজল ডাঙ্গা, হাতিয়া বকসি, নাইয়ার চর, দুইশো বিঘা, গয়নার পটল, বড় বাগ, খেদাইমারী, খেরুয়ার চর, শাখাহাতী, মনতোলা, তেলী পাড়া, মাঝস্থল, গুড়াতি পাড়া, বাসন্তি গ্রাম, মাঝি পাড়া, হাটি থানা, কালিকুরা, সড়কটারী, দক্ষিণ খামার এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়ি ঘরে হাঁটু পরিমাণ পানি হওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আশ্রয়ণ কেন্দ্র, বাঁধের রাস্তা, স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

রাজারভিটা ফাজিল মাদরাসায় আশ্রিত নজির হোসেন (৭৫) জানান, প্রথম দফা বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় পরিবার পরিজনসহ এই মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বাড়িতে যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় আবারো ২য় দফা বন্যার পানি ঘরে ওঠায় আবারও মাদরাসায় আসতে হলো।

মাদরাসায় আশ্রিত করিমন (৫৫) জানান, ঘরে কোমর সমান পানি হওয়ায় অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদেরকে নিয়ে মাদরাসায় আশ্রয় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।

উত্তর রমনা বাঁধে আশ্রিত আহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, ঘরে এক বুক পানি হওয়ায় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।

কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে ৪শ’ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে ১৭০ মেট্রিকটন চাল উপজেলাগুলোতে উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার শুকনা প্যাকেটের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেট, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারী বৃষ্টিতে সৌদিতে স্কুল বন্ধ, বন্যার সতর্কতা
বন্যা-ভূমিধসে ইন্দোনেশিয়ায় ২৬ প্রাণহানি
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে সম্মাননা জানাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় 
বেড়িবাঁধ সংস্কারে বন উজাড়, ঝুঁকিতে সমুদ্র উপকূলের মানুষ
X
Fresh