• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কক্সবাজার সৈকতের বর্জ্য অপসারণ শুরু

কক্সবাজার প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৫ জুলাই ২০২০, ২১:০৪
Cox’s Bazar beach waste removal begins
কক্সবাজার সৈকতের বর্জ্য অপসারণ শুরু

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা টন টন বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবীরা আজ বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ শুরু করে।

এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জমে থাকা এসব বর্জ্য অপসারণ করছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী টিম। সৈকতের বিস্তৃত এলাকার টন টন বর্জ্য অপসারণে আরও ২ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে কি কারণে এসব বর্জ্য এসেছে তা এখনো জানা যায়নি।

বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের শুরুতে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) ইমরান জাহিদ, এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ, ইয়েসের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ফোরামের সমন্বয়ক এইচএম নজরুল ইসলাম, দরিয়ানগর গ্রিন বয়েজের সমন্বয়ক পারভেজ মোশারফ প্রমুখ।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহায়তায় গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক বর্জ্য, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল ও রশিসহ জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা নানা ধরনের বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়।

সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর পয়েন্টসহ ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণ করছে সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। বর্জ্য পরিষ্কারে সেচ্ছাসেবীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদ।

সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ফোরামের সমন্বয়ক এইচএম নজরুল ইসলাম জানান, নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার বর্জ্যে অপসারণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। যা বাকী রয়েছে তা পরবর্তীতে লোকজন দিয়ে করানো হবে।

তিনি বলেন, শুধু বর্জ্য অপসারণ নয়, এসময় মৃত কাছিম মাটিতে পুঁতে ফেলা, জীবিত কাছিমকে সাগরে অবমুক্ত করার কাজ করেছে ৫ শতাধিক পরিবেশকর্মী।

সরজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা টন টন বর্জ্য এখনো রয়ে গেছে। শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী সায়মান বিচ পয়েন্ট, দরিয়া নগর এবং হিমছড়ি পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার সৈকতের বালুচর জুড়ে রয়েছে বর্জ্য। গত ৪ দিন ধরে স্থানীয়দের বস্তা বস্তা বর্জ্য সংগ্রহ অব্যাহত থাকা স্বত্বেও কোনও ভাবেই শেষ হচ্ছে না। বরং সৈকতের বালুতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য যেমনি চাপা পড়ছে তেমনি আবার জোয়ার-ভাটায় বর্জ্য সাগরে নামছে এবং চরে আটকা পড়ছে।

জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা বর্জ্যেরে কারণে সাগর তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ দূষণের আশংকাও প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাগরের বৈরি আবহাওয়ায় জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে বিপুল পরিমাণের বর্জ্য। পরিবেশের ক্ষতির আশংকা মাথায় নিয়ে জেলা প্রশাসন বর্জ্য সংগ্রহের জন্য সৈকতে নেমেছে।

সমুদ্র সৈকতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদ খান জানিয়েছেন, বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ চলছে। সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে শুরু করে দরিয়া নগর ও হিমছড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গত সোমবার থেকে এসব বর্জ্য অপসারণ শুরু হয়। সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্মী, কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এবং লাকড়ি কুঁড়িয়ে লোকজন স্বেচ্ছায় বালুচর থেকে বস্তা ভর্তি করে বর্জ্য নিজেদের প্রয়োজনে নিয়ে যাচ্ছে। আজ ১৫ জুলাই থেকে বৃহৎ পরিসরে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে এই বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হলো।

এদিকে সামুদ্রিক জোয়ারে ভেসে আসা বর্জ্যে যেসব সামগ্রী রয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই বিদেশি পণ্য সামগ্রী এবং ৩০ ভাগের মতো দেশীয় পণ্য বলে প্রাথমিক ধারণায় বলা হচ্ছে।

কক্সবাজার সাগর পাড়ের দরিয়া নগরের বাসিন্দা এবং পরিবেশবাদী কর্মী আহমদ গিয়াস এ প্রসঙ্গে জানান, ভেসে আসা মদের বোতলগুলোর মধ্যে বার্মিজ মদের বোতলের হার ১০ শতাংশ। বেশিরভাগ মদের বোতল ইউরোপের তৈরি। যার মধ্যে জিআর লেখা তাজ মার্কা বোতল ও রয়েল কোম্পানির মদের বোতলই বেশি। কয়েকটি অফিসারস চয়েস এর বোতলও পাওয়া গেছে।

এছাড়া মাছ রাখার ঝুড়ি, জাল, ছোট ছোট বয়া, লাইটসহ কিছু আসবাবপত্রও পাওয়া যাচ্ছে। যা অবশ্যই ডিপ সী ট্রলারের। বর্জ্যের মধ্যে ক্যাপও পাওয়া গেছে। যার মধ্যে একটি ক্যাপ ছিল নৌবাহিনীর একজন লে. কমান্ডার পদমর্যাদার কর্মকর্তার। কিছু রকজাল পাওয়া গেছে। যা আমাদের দেশের ছোট ছোট বোটেও ব্যবহৃত হয়। কাঠখন্ড, বাঁশ, স্যান্ডেল, বেভারেজের বোতলসহ প্লাস্টিক-পলিথিনগুলো মোট বর্জ্যের প্রায় ২৫ ভাগ যা দেশের নদনদী থেকে গিয়ে মিশেছে। অর্থাৎ মোট বর্জ্যের ৭৫ ভাগ সমুদ্রে বিচরণকারী ব্যক্তিদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্য বলে পরিবেশবাদীরা মনে করছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, বিদেশি বড় বড় ফিশিং জাহাজ বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার ভেতরে এসে মাছ আহরণ করে নেয়ার ঘটনা প্রায়শ ঘটে থাকে। এসব মাছ ধরা জাহাজ থেকেও বর্জ্য ফেলার অভিযোগ উঠে। তবে তাও কক্সবাজার উপকুল থেকে অনেক দূরে অর্থাৎ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে এসব ঘটতে পারে।

কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান কক্সবাজারের জেলেদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও দক্ষিণে অনেক দূরে, নাই বিও (তলা বিহীন বা মাপার দড়ির চেয়েও গভীর) নামক স্থানে একটি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিশাল এলাকা রয়েছে। যার উপর ভিত্তি করে সেখানে একটি স্বতন্ত্র ইকোসিস্টেমস তৈরি হয়েছে। সেখানে পাখি বাসা বাঁধে, সাপ বিচরণ করে, সামুদ্রিক মাছ ও কচ্ছপসহ নানা প্রাণী বাসা বাঁধে ও প্রজনন করে। সেসব বর্জ্যের গায়ে বাসা বাঁধে বার্নাকল্স নামের এক ধরনের শক্ত খোলসযুক্ত কাঁকড়াও। আর এসব বার্নাকল্স এর আকার দেখে মনে হচ্ছে, এ বর্জ্যের বয়স অন্তত এক বছরের কাছাকাছি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির উদ্যোগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হঠাৎ ভেসে আসা বিপুল বর্জ্য পরিষ্কারের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় সম্মিলিত বিচ ক্লিনিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার কাজে যারা এগিয়ে এসেছেন তিনি তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

এদিকে ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটি বর্জ্য ভেসে আসার কারণ জানাতে পারেনি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বলছেন, গভীর সমুদ্রে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমুদ্রে জমে থাকা এসব বর্জ্য ভেসে আসতে পারে।

প্রসঙ্গত, গেল ১১ জুলাই রাতে জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসে প্লাস্টিক, ই-বর্জ্য ও ছেড়া জাল। সাথে অনেক সামুদ্রিক কাছিমও ভেসে আসে সৈকতে। এর মধ্যে কিছু মারা গেছে বলে জানা গেছে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এক পা নিয়ে জন্ম নিলো শিশু, পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
একদিন পরেই জয় বাংলা কনসার্ট, প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে
অভাবে সন্তান দত্তক, পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলো প্রশাসন
কক্সবাজার সৈকতে আবারও ভেসে এলো মৃত ডলফিন
X
Fresh