বাঁধটি ভেঙে গেলে কাঁদবে কৃষক
গত বছর বন্যায়ও বাঁধটি ভেঙ্গেছিল। প্লাবিত হয়েছিল ছোট বড় প্রায় ১৩টি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল হাজার হাজার একর ধানি জমি। সেই সময় জনপ্রতিনিধি, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় প্রশাসন বাঁধ পরিদর্শনে আসেন।
স্থানীয় প্রশাসন শুষ্ক মৌসুমে বাঁধটি মেরামত করার জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ বরাদ্দ দিলেও তেমন কাজ হয়নি। ফের এ বছর বাঁধটিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের জামুরিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর এলাকায় ঝিনাই নদীর (পাড়) এ বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে এ বছরও প্লাবিত হবে উপজেলার পূর্ব অঞ্চল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানায়, নদীর ওই পাড়টি তাদের কাবিখার রাস্তা, কিন্তু এলাকাবাসী পূর্বপুরুষ হতে জেনে আসছেন এটি বাঁধ। গত বছর বন্যায় বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় মেরামতের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরে খাবিখার সাড়ে ১১ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।
নিয়ম অনুসারে প্রকল্পের সভাপতি হন জামুরিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার শামীম আল মামুন (মিলন)। চার ভাগের ওই বরাদ্দের প্রথম দুইভাগে কিছু কাজ হয়। পরবর্তী একভাগ অগ্রিম বরাদ্দের কোনো কাজ হয়নি এবং সঠিক সময়ে কাজ না করতে পারায় প্রকল্পের আরও একভাগের টাকা সরকারি কোষাগারে চলে গেছে।
অপর দিকে পরিদর্শন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম। তাদের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাত্র একশত ফুটের মতো জায়গায় সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে। বাঁধের গোঁড়া দিয়ে চুয়ে চুয়ে পানি বের হচ্ছে এবং প্রায় অর্ধেক অংশ চলে গেছে নদীগর্ভে। ভয়ে ওই স্থান দিয়ে লোকজন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
শংকরপুর গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, নদীতে এখন যে পানি দেখা যাচ্ছে এই বাঁধ ভাঙ্গলে ঘাটাইলের একাংশ তলিয়ে যাবে। ওই বাঁধ মেরামতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন শংকরপুর গ্রামে সবুর উদ্দিন। তিনি বলেন, ১৬ জন শ্রমিক কাজ করি, কিন্তু মেম্বার আমাদের এখনো টাকা দেননি। চাইলে বলে বিল ওঠাইতে পারি নাই কিভাবে দেব।
বীরসিংহ গ্রামের রায়হান তালুকদার জানান, গত বছর নদীর এই বাঁধ ভাঙ্গার ফলে আমার ৩০ বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়।
জামুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, মেম্বার গ্রামের সবাইকে বলেছেন তিনি নিজের টাকায় কাজ করতেছেন, সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তিনি এখানে যা খুশি তাই করেছেন।
প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি মেম্বার শামীম আল মামুন (মিলন) বলেন, আমি প্রকল্পে যা বরাদ্দ ছিল তার পুরো কাজই আমি করেছি। তাহলে সরকারি কোষাগারে কেন টাকা ফেরত গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে কাজ সন্তোষজনক হয়নি বলে ফেরত গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, সম্পূর্ণ কাজ করার জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু কাজ পুরোপুরি হয়নি, তাই আমরা সন্তুষ্ট নই। প্রকল্পের চার ভাগের একভাগ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অগ্রিম দেওয়া অর্থ কাজের মাধ্যমে সমন্বয় করা হবে।
ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, যে কোনো সময় বাঁধটি ভেঙ্গে যেতে পারে। প্লাবিত হবে বাঁধের পূর্ব অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বাঁধটি রক্ষা করার জন্য। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে।
এজে
মন্তব্য করুন