অনুমোদন ছাড়াই করোনা পরীক্ষার অভিযোগে ক্লিনিক মালিক কারাগারে
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই করোনা পরীক্ষা করার অভিযোগে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আটক করেছে পুলিশ। পরে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরএনপিপিতে কর্মরত করোনা টেস্টের রিপোর্ট প্রাপ্ত শ্রমিক ও থানা সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানা এবং নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নটাবাড়িয়া গ্রামের আরশেদ আলী সরকারের ছেলে সুজন আহমেদ পরস্পর যোগসাজশে গোপনে গত তিন দিন ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান কোম্পানি টেস্ট রোসেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার জন্য প্রকল্প সংলগ্ন ফটু মার্কেট এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার মাঠে তাঁবু টাঙ্গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। এই নমুনা তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এই জন্য প্রতিটি রিপোর্টের জন্য ৫/৬ হাজার টাকা নেন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান প্রতি রিপোর্টের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এরপর অনলাইনে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের ঠিকানায় রিপোর্ট আসে। সেখান থেকেই কম্পিউটার প্রিন্টের মাধ্যমে রিপোর্ট সংশ্লিষ্টদের নিকটে পাঠানো হয়।
কিন্তু করোনার নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো নমুনা সংগ্রহ করবে। আর সেগুলো সিভিল সার্জনের অনুমতিতে নির্ধারিত পিসিআর ল্যাবে যাবে। রিপোর্টগুলোও সিভিল সার্জন অফিস কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।
তবে, এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের পরিচালক অবৈধভাবে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা টেস্টের রিপোর্টগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান ডাক্তার আবু সাইদের স্বাক্ষর রয়েছে। প্রকল্পের শ্রমিকদের হাতে করোনা টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট। তারপরও প্রতিনিয়তই প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়ছেই। ফলে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক থেকে প্রাপ্ত টেস্টের রিপোর্ট নিয়েও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি মাসের গত ৪ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পে কর্মরত টেস্ট রোসেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর প্রত্যেকের নিকট থেকে নেওয়া হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা।
এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাক্তার আবু সাইদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আমি চিনি না। ওই নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ৫০ জনের নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আমরা গত ৬ তারিখে পাঠিয়েছি।
তিনি আরও জানান, রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিকদের করোনা টেস্টের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
আমাদের ধারণা ছিলো রূপপুর মেডিকেয়ার সরকারি অনুমোদন নিয়ে এই কাজ করছে। কিন্তু তাদের অনুমোদন নেই- বিষয়টা জানতে পেরে আমরা আর তাদের সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করছি না।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসীর উদ্দিন জানান, ঈশ্বরদী রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আটক করে তিন জনের নামে মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
এজে
মন্তব্য করুন