• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সিরাজগঞ্জে আড়াই লাখ পশু প্রস্তুত, খামারিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৮ জুলাই ২০২০, ২২:৫৫
সিরাজগঞ্জে আড়াই লাখ পশু প্রস্তুত, খামারিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

সিরাজগঞ্জ জেলা অতীতে শুধু দুধের জন্য প্রসিদ্ধ হলে বর্তমানে গবাদি পশুর পাশাপাশি গো-খাদ্যের জন্য উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বেশ গুরুত্ব বহন করছে। এ জেলার গবাদি পশু ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতি বছরই বিক্রি হয়ে থাকে। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে চলমান করোনার মধ্যেও শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি ও উল্লাপাড়ার মোহনপুরসহ সিরাজগঞ্জের নয়টি উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ দেশী গবাদি হৃষ্টপুষ্টভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে এবার করেনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি ‘রেডিফিড’ গো-খাদ্য বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে করোনায় গবাদিপশু পরিবহন, ক্রেতা সমাগম ও দাম ঠিকমত পাবেন কি-না, এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার খামারি ও বিক্রেতারা। বলতে গেলে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে।

শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের চরগুধিবাড়ি গ্রামের খামারি হাজী গোলজার হোসেন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা খরচ করে আমার খামারে ৮টি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। চলমান করেনার মধ্যে এসব গরু কোথায় বিক্রি করবো বা ক্রেতা পাব কি-না, এ নিয়ে আমি এখন থেকেই মহা দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতি গরুর পেছনে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ হচ্ছে।

এ গ্রামের খামারি বেলাল সরকার জানান, প্রতিবেশীদের নিকট থেকে ধার-দেনা করে ৩টি ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করছি। চলমান করেনায় এগুলো বিক্রি করে ঠিকমত দাম পাবো কি-না, তার জন্য দুশ্চিন্তায় আছি।

পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি ও মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির জানান, বর্তমান সময়ে বাঘাবাড়ি অঞ্চলে গো-খাদ্যের দামও বেশি, তারপরেও পাঁচটি ষাঁড় প্রস্তুত করছি। করোনার মধ্যে দাম ঠিকমত পাব কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

উল্লাপাড়ার পশ্চিম পাড়ার গরু খামারি রিমন মণ্ডল জানান, প্রতিবছর ঢাকা চট্টগ্রামের পার্টিরা সরাসরি খামার থেকে গরু নিয়ে যায়। এবছর ১০/১২টি গরু নেবার কথা জানিয়েছেন তারা। করোনার কারণে শেষপর্যন্ত তারা আসবেন কি-না, এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

পংরৌহা গ্রামের খামারি রেজাউল হোসেন জানান, করোনার মধ্যে অনেক অর্থ ব্যয় করে ৮টি গরু প্রস্তুত করেছি। বাইরের পার্টি না পেলে স্থানীয় হাটে তুলতে হবে। সচেতন ক্রেতারা করোনার ভয়ে অধিকাংশই হাটে যাবেন না। পশু আদৌ বিক্রি হবে কি-না, এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নও আছি।

বড় পাঙ্গাসীর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারি সজিব আহম্মেদ বলেন, প্রতি বছর পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া, জনতা, বড়হর ও গ্যাসলাইন হাটে গিয়ে সরাসরি গবাদি পশু বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সেভাবে গরুর হাটও বসবে বা ত্রেতা সমাগম হবে কি-না, তা বুঝতে পারছি না। শেষপর্যন্ত গরু আদৌ বিক্রি হবে কি-না, এনিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে।

কামারখন্দের রায়দৌলতপুর গ্রামের খামারি রকিব ভুঁইয়া বলেন, প্রতি বছর খুলনা, ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির অনেক আগেই গরু বিক্রি করে থাকি। এ বছর তিনি ৮ থেকে মাত্র ১০টি গরু বিক্রির প্রতিশ্রুতি পেলেও বাকী আরও ১০টি কোথায় বিক্রি করবো, এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছি আমি।

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. মোরশেদ উদ্দিন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ৩০ হাজারের অধিক গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গবাদি পশু বিক্রি করে খামারিরা যেনও কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে পারে তার জন্য অ্যাপস তৈরির কাজ চলছে। অ্যাপস এর মাধ্যমে গবাদি পশু বিক্রি করতে পারলে খামারিরা সব দিক দিয়েই লাভবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আলহাজ ডা. মোঃ আখতারুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, প্রতি বছরই আমারা খামারিদের যেমন হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেই, এবার কোরবানির আগে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার জন্য হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে জেলায় প্রায় আড়াই লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৪ বছর ধরে দেশী প্রজাতির গবাদি পশু দিয়েই কোরবানির ঈদের বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। চলমান করোনা নিয়ে খামারি বা বিক্রেতাদের উদ্বিগ্নের বিষয়টি যৌক্তিক। ক্রেতা ঠিকমত না পেলে তাদের হতাশা দেখা দিবে। তারপরেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে জেলার বিভিন্ন স্থানে গরু ছাগলের হাট পরিচালনার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রশাসনের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, চলমান করেনায় কোরবানির আগে পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানবে তা নিয়ে আমরাও বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। সেজন্য অনলাইনে গবাদি পশুর বিক্রির বিষয়েই সকলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নেশনস কাপে মিশরের সৌভাগ্যের আশায় গরু কোরবানি
X
Fresh