• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

কুড়িগ্রামে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি (উত্তর), আরটিভি নিউজ

  ২৭ জুন ২০২০, ০১:১০
More than 30,000 people Kurigram waterlogged
কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হাজারও মানুষ। ছবি: আরটিভি নিউজ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের সবকটি নদীর পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। শুক্রবার (২৬ জুন) সকালে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ছাড়িয়ে যায়।

সন্ধ্যা ৬টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধরলা বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজারও মানুষ।

জেলার নয় উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পানিবন্দি মানুষের খবর পাওয়া গেছে।

বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় পরিবারের লোকজনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। আগাম বন্যার ফলে চরাঞ্চলের আবাদি ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে তিল, চিনা, বাদাম ও সবজি ক্ষেতের। অন্যের কাছে ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করে বড় ধরণের ক্ষতিতে দিশেহারা কৃষক।

নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের জব্বার, নাসির, মমিনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদের সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খাসের চর এলাকার বড় কৃষক বাচ্চু ও সামাদ জানান, ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৭ একর জমিতে তিল, চিনা আর বাদাম লাগিয়েছে। বন্যায় সব খেয়ে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের পথে বসার যোগার।

পার্শ্ববর্তী সিপের চরের হোসেন কবিরাজ জানান, জমির ধান দিয়েই সংসার চলছিল। এবার আগাম বন্যায় আউশ ধান, চিনা, ভুট্টা সব বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। বড় কৃষক বলে এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ দেয়নি। এখন বন্যায় আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ইন্দ্রগড়, ধনিরামপুর, শৌলমারী, জালির চর, কাইয়ের চর, বল্লভের খাস ইউনিয়নের ইসলামের চর, চর কৃঞ্চপুর, কামারের চর, নারায়নপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ নিম্ন চরাঞ্চল ও নুনখাওয়া ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকারচর, রলাকাটা, ভগবতিপুর, পোড়ারচর, কালির আলগা, গোয়ালপুরী, রলাকাটা, চর পার্বতীপুর, চর ঘনেশ্যামপুর, সিপের চর, চরযাত্রাপুরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় কয়েকশ পরিবার পানিবিন্দ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুরসহ উলিপুরের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নারায়নপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন তার পুরো ইউনিয়ন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ২০০ পরিবারের বাড়িতে পানি উঠেছে।

কচাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রায় ছয়টি ওয়ার্ডের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বল্লভের খাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকমাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের মাঝিপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষজন উঁচু স্থান এবং স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে পানি উঠায় এসব এলাকার চলতি মৌসুমের ফসলি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাট, ভুট্টা, তিল, সবজিসহ আউশ ধান।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ পর্যন্ত দুই উপজেলার পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তাতে ৩৭ হেক্টর আউশ, ৯৩ হেক্টর তিল এবং ৬ হেক্টর মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হবে। প্রায় দেড় সপ্তাহ এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে। এর মধ্যে কিছুটা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা ত্রাণ শাখা জানায়, এ পর্যন্ত বন্যা কবলিতদের জন্য ২৮২ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো এবং শিশু খাদ্যর জন্য ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যা মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারী বৃষ্টিতে সৌদিতে স্কুল বন্ধ, বন্যার সতর্কতা
বন্যা-ভূমিধসে ইন্দোনেশিয়ায় ২৬ প্রাণহানি
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে সম্মাননা জানাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় 
বেড়িবাঁধ সংস্কারে বন উজাড়, ঝুঁকিতে সমুদ্র উপকূলের মানুষ
X
Fresh