সিলেটে যুবকদের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে করোনা!
সিলেটে করোনাভাইরাস সব চাইতে বেশি ছড়াচ্ছে যুবকদের মাধ্যমেই। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে নারীর চাইতে পুরুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ বেশি। সিলেটে গত ৫ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেছেন, পরিসংখ্যানের আলোকেই সিলেট বিভাগে যুবকদের মাধ্যমে বেশি মাত্রায় করোনা ছড়াচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, উল্লিখিত সময়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৯৮৫ জন। এর মধ্যে ১ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশু আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৭ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৪ জন। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২২জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী আক্রান্তের সংখ্যা ২৭৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১১১ জন, ৭১ বছরের ঊর্ধ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জন। এছাড়া আক্রান্ত যাদের বয়স লিপিবদ্ধ হয়নি তাদের সংখ্যা হচ্ছে ৩৬ জন।
উল্লিখিত পরিসংখ্যানটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকরাই আক্রান্ত হচ্ছেন সব চাইতে বেশি। এর সঙ্গে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা মিলে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৭৪৬ জন। অর্থাৎ বলা যায় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা হচ্ছেন মোট আক্রান্তের দুই তৃতীয়াংশ।
এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে যেহেতু যুবকরা সবচাইতে বেশি পরিমাণে বাইরে যায়। সুতরাং তাদের মাধ্যমেই কোভিড-১৯ বা করোনা রোগটি বেশি ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ এরাই বাহির থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস বহন করে ঘরে ফিরছে এবং তাদের কাছ থেকেই ঘরের নানা বয়সী মানুষেরা সংক্রমিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন আশঙ্কার সমর্থনেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
আক্রান্ত যুবকদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে, কেউ হাট-বাজার করতে গিয়ে অথবা অহেতুক আড্ডা দিতে গিয়েও কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন। এ সময় তারা সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না বলেও স্বজনরা জানান।
আক্রান্ত এক আইনজীবী যুবকের স্বজন আরেক আইনজীবী জানান পেশাগত দায়িত্ব নয় বাজার করতে গিয়েই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিলেট বিভাগে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে নারী পুরুষের তুলনামূলক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আক্রান্ত নারীর চাইতে পুরুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ বেশি। ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে যেখানে নারী আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ দশমিক ২ ভাগ সেখানে পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ দশমিক ৮ ভাগ।
অন্যদিকে সিলেট বিভাগে দিনদিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সিলেট জেলায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আরও ৭৯ জন নিয়ে মোট ১ হাজার ৯৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে শনাক্ত হয়েছে মোট ৩ হাজার ৫৭০ জন করোনা রোগী।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আরটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান ওসমানীর ল্যাবে করোনা টেস্ট সেট আরেকটি বাড়িয়ে ৩ সেট করা হয়েছে। ল্যাবের শুরু থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই সেট অর্থাৎ ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হত। মঙ্গলবার থেকে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে, সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ রাখতে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতির ভেন্টিলেশন সিস্টেম ‘হ্যাপা ফিল্টার সিস্টেম’। সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী এ ফিল্টার সিটি করপোরেশনকে প্রদান করেছেন।
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হ্যাপা ফিল্টার আইসিইউয়ের মধ্যে নেগেটিভ প্রেশার তৈরি করে। যার ফলে সেখানে যে জীবাণুগুলো থাকে তা আর থাকতে পারে না। ফিল্টারটির কাজ প্রায় এক মাস আগে শুরু হয় আর গত ২০ জুন শেষ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ফিল্টার আইসিইউতে স্থাপিত করায় সেখানে সেবা দেওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি অনেক কমেছে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, এটি স্থাপন করতে প্রায় দশ থেকে বারো লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যা বহন করেছে সিটি করপোরেশন।
এদিকে করোনা টেস্টের ফলাফল পেতে দেরীর কারণেও মানুষের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। ২৫/৩০ দিনেও রেজাল্ট না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
সিলেট নগরীর কুমারপাড়া ঝর্নারপাড় এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ দিদার আলম জানান গত ২৯ মে টেস্টের জন্য নমুনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ ২৬ দিনেও কোনো ফল পাননি। দিদার আলম বলেন, আমি নিজেকে নিজেই সুস্থ মনে করি সুতরাং এই ফল পাওয়ার আর আশা করিনা।
এদিকে, সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার পরও লকডাউন বা নতুন করে কোনো বিধি নিষেধ আরোপ না করায় জনমনে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যাদের মাধ্যমে কোভিড-১৯ অতি মাত্রায় ছড়াচ্ছে সেই যুবকদের অবাধে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো ধরনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।
যে কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন এগুলো নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নেয়া হলে সিলেট বিভাগের করোনা পরিস্থিতি দমিয়ে রাখা কঠিন হবে।
এজে
মন্তব্য করুন