• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পেটের দায়ে রিক্সাওয়ালি

শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম

  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৭

রিক্সাচালকের আসনে কোন নারী বসে আছেন, বাংলাদেশে এমন দৃশ্যের দেখা মেলা ভার। নারীরা সব কাজে হাত বাড়ালেও এ কাজে সাহস করেননা। তবে জেসমিন আক্তার ফাতেমা একেবারেই ব্যতিক্রম। বেঁচে থাকার সংগ্রামে পুরুষদের পাশাপাশি রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। রোজগারের টাকায় সন্তানকে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি ৫ জনের সংসারও সামলাচ্ছেন তিনি।

দেশে রিক্সা বেশ জনপ্রিয় পরিবহন হলেও চালানোটা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে এ অসাধ্য সাধন করেছেন ফাতেমা। নগরীর ওয়াসা, জিইসি, লাভলেইন মোড়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরে মাথায় গামছা পেঁচিয়ে রিক্সা চালাতে দেখা যায় ফাতেমাকে। রিক্সা চালানোর সময় উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে যাত্রীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা থাকে তার।

ঘড়ির কাঁটায় বেলা একটা। মাথায় বানরের বাচ্চা নিয়ে বাণিজ্য নগরীর কাজির দেউড়িতে ‘আসবার কালে আসলাম একা/ যাবার কালে যাবো একা/ মাঝে মাঝে মনোরে বলি/ চক্ষু মেলে কি দেখলা' গানটি বাজিয়ে রিক্সা চালাচ্ছিলেন ‘রিক্সাওয়ালি’।

চল্লিশ বছর বয়সী ফাতেমার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ইলিয়তগঞ্জ ইউনিয়নের বাপোটি গ্রামে। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় রিক্সাচালকের সঙ্গেই। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্বামীকে প্রবাসে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী বিদেশ থেকে ফিরে বিয়ে করেন আরেকটি। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

ফাতেমা ৩ সন্তানের জননী। চট্টগ্রাম নগরীর ৮০ উর্ধ্ব মা মোমিনা খাতুনকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের ওয়ারলেস এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার ৩ সন্তান তাজুল ইসলাম, হাসান ও হোসাইন থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে একটা ছোট ভাইও থাকেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে ফাতেমা তৃতীয়।

গেলো ১২ বছর ফাতেমা সপ্তাহে ৭ দিনই সকাল ৭টা থেকে রিক্সা চালাতে বের হন ফাতেমা। দুপুরে বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করেন। ৩টার দিকে আবার বের হন, রিক্সা চালান রাত ৮টা পর্যন্ত।

দৈনিক ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন ফাতেমা। এর মধ্যে রিক্সাভাড়া জমা দেন ৩০০ টাকা করে। রিক্সা কীভাবে চালানো শিখেছেন জানতে চাইলে ফাতেমা বলেন, 'নিজে নিজে চালানো শিখসি। চট্টগ্রামে প্রথমে আসার পর বিআরটিসি গাড়ি ক্লিনিং করতাম। বাসা বাড়ির কাজ থেকে গার্মেন্টের কাজ সবই করসি।'

ফাতেমা জানান, 'বাসা-বাড়িত কাজ করি পাই হাজার দেড়েক। গার্মেন্টসে ২-৩ মাসের বকেয়া রাখে মালিক। দ্যাশের মানুষ সবাই তো ভালো না। কেউ আমাগো দিয়ে খারাপ কাম করনেও চেষ্টা করেন। এসব ভালো লাগে না। রাস্তা ঘাটে দেখি স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েরা খারাপ কাজ করে। কেনো মেয়েরা খারাপ কাজ করবে, আমি মানতে পারিনা।'
তিনি বলেন, 'পুরুষ পারলে আমরা ক্যান পারবো না? জীবনে কষ্ট করেছি বহুত। বড় পোলা সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিবো। ছোট দু'পোলা মনোযোগ নাই, তাই গ্যারেজে দিছি অগো।'

রিক্সা চালাতে গিয়ে এ নারীকে প্রতিনিয়তই সহ্য করতে হয় নানা কটুকথা। তবে অনেকেই তার সাহসী কাজের প্রশংসা করেন। মা রিক্সাচালক হওয়ায় সন্তানরা যাতে অসম্মানিত বোধ না করেন সেজন্য নিজের কাছ থেকে দূরে গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন প্রিয় সন্তানদের।

'আমরা তো বাঙালি। মানুষ কতো কথা কয়, রাস্তায় টিক্কিরি মারে। কেউ আন্টি কইয়া সালামও দ্যায়। কেউ খারাপ কথাও কয়। আমি কারো কথায় কান দিই না, আমি রিক্সা চালায়।'

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh