জমায়েত ঠেকাতে চায়ের দোকানের টিভি সিজ করা হবে নাটোরে
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর/ তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত এই কবিতাটির জন্য আজো মানুষের মনে উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক জেলা নাটোরকে নিয়ে ভিন্ন অনুভূতির ভাবনা আনে। এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন কাঁচা গোল্লার স্বাদ জিভে জল এনে দেয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটোরের চলনবিল, পরিপাটি শহরসহ এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ ৮টি প্রদেশসহ নাটোরে মিনি পার্লামেন্ট ভবন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতির পাশাপাশি নাটোরবাসীকেও শত বছর পিছিয়ে দিয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা পড়েছে বঙ্গবন্ধুর এই প্রিয় জেলাতেও। এরই মধ্যে জেলার ৯৬ জন করোনায় আক্রান্ত, নমুনা টেস্ট হয়েছে ৩১৬৮টি, ৫৪৩ জনের ফলাফল এখনও আসেনি। সুস্থ হয়েছেন ৫৬ জন। একজন মারা গেছেন। মৃত্যুর পরে পরীক্ষার পর দেখা যায় তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন। এর মধ্যে নাটোর জেলা পুলিশের ২২ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তাদের সবাই এখন সুস্থ।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই কঠোর অবস্থান নেয় নাটোরের পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু গেল ঈদ উল ফিতরের কিছুদিন আগে থেকে কিছুটা ঢিলে-ঢালাভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সুযোগে এলাকা ভিত্তিক বড় হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। গণজমায়েত করে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ মানুষ চলা ফেরা করছেন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে চায়ের দোকান যেন টিভি চালিয়ে মিনি সিনেমা হলের আঁকার ধারণ করেছে। সকাল থেকে রাত ১১টা অবধি মানুষ চা, পান, সিগারেট ফুঁকে গাদাগাদিভাবে বসে বিনোদন উপভোগ করছেন। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন নাটোর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা।
পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। মানুষ আর করোনাকে ভয় পাচ্ছেন না। বা অনেকে ধরেই নিয়েছেন করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ আড়াই হাজার টাকা সারাদেশে অনেক মানুষ পেয়েছেন। তারপরও সবার দায়িত্ব তো সরকারের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। ফলে অনেকেই জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।
লিটন কুমার সাহা আরও বলেন, আমাদের জেলায় ২০ লাখ মানুষ। যদি রেড জোনের আওতার কথা বলা হয় তাহলে প্রতি লাখে ১০ জন। এটা কিন্তু এখনও আমাদের কাভার করেনি। ২০০ জন রোগী এখনও হয়নি। তবে আজকেই (১৮ জুন) প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে বিশেষ মিটিং করেছি। সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী রোববার (২১ জুন) থেকে নাটোরে করোনা প্রতিরোধ পক্ষ ঘোষণা করেছি। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কড়াকড়িভাবে দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিয়ে, জন্মদিন, খতনাসহ যেকেনো সামাজিক অনুষ্ঠান হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবহনকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করবো, অটো বা মোটরসাইকেলে কাউকে মাস্ক ছাড়া একজনের বেশি উঠতে দেয়া হবে না। হাট যেগুলো মিশে গেছে তা ডিসেন্ট্রালাইজ করবো। যে চায়ের দোকানগুলো এতদিন বন্ধ ছিল তাদেরকেও জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। চায়ের দোকান বন্ধ করে আমরা ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো অথবা দোকানের টিভি সিজ করা হবে। তাহলে মানুষের জমায়েত কিছুটা কমবে। আমরা দুই লাখ মাস্কের প্রস্তাব দিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যারা মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হবেন তাদের মাঝে কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করা হবে। সবাই যদি হাত বাড়ায়, দুই লাখ মাস্ক দেয়াটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে না।
নাটোর জেলার এই পুলিশ সুপার বলেন, যেসব বাড়িতে করোনা রোগী পাওয়া গেছে শুরু থেকেই আমরা লাল পতাকা টাঙিয়েছি। রোববার থেকে আবারও জেলার প্রতিটি অঞ্চলে করোনা সচেতনতা নিয়ে মাইকিং করা হবে। জেলার ২০ লাখ মানুষকে কোনোভাবেই করোনার ঝুঁকিতে আমরা ফেলতে পারি না। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এম/সি
মন্তব্য করুন