• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যৌতুক পরিশোধে দেড় মাসের শিশুকে বিক্রি, তারপরও থামেনি স্বামীর নির্যাতন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ১৪ জুন ২০২০, ১৯:৪৮
Paying dowry selling baby husband's torture not stop
যৌতুকের জন্য এভাবে গৃহবধূকে মেরে ফেলে রাখা হয়। ছবি: আরটিভি অনলাইন

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে খুঁটির সঙ্গে বেধে অমানুষিক ভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর স্বামী, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর মা শুকরি বেগম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় মেয়ের জামাই আশরাফকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার পর আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা এলাকার মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিলো। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন না যেতেই সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এরপর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার কথা বলে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় পাষণ্ড স্বামী আশরাফ।

নির্যাতিতা গৃহবধূ যৌতুক এনে দিতে না পেরে ৬ মাস আগে তার দেড় মাসের শিশুকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। তাতেও শান্ত হয়নি স্বামী। গত শুক্রবার গৃহবধূকে আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় তার স্বামী ও পরিবারের ৭-৮ জন সদস্য তাকে খুঁটির সঙ্গে বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

পরে স্থানীয়রা এসে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ওই নারীর মা শুকুরি বেগম বাদী হয়ে শনিবার টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী মাঝে মাঝেই যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। আমার বাবা নাই। মা কষ্ট করে দুই দফায় টাকা দিয়েছেন। দুইবার টাকা দেওয়ার পরও তিনি আবার টাকা দাবি করেন। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধরের হুমকি দেয়। পরে শুক্রবার আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে।

পেটানোর এক পর্যায়ে আমার বুকের মধ্যে একটা লাথি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেধে লাঠি দিয়ে আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে টাকার জন্য আমার ছয় মাস বয়সী এক সন্তান বিক্রি করেছি। এতো টাকা দেওয়ার পরও তার টাকা প্রয়োজন। আমি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যারা জড়িত ছিলো তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, টাকার জন্য ওই নারীকে এর আগেও তার স্বামী তালাক দিয়েছিলো। তালাকের পর কাবিনের টাকা দিতে না পারায় পুনরায় ওই নারীকেই বিয়ে করেন আশরাফ। তারপরও আশরাফের টাকার খায়েস মেটেনি। টাকার জন্য তার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা খুঁটিতে বেধে মারধর করেছেন। যারা এই মারধরের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।

সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশকে অবগত করি। এ ন্যক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ওই নারীকে তার স্বামী মারতে পারে। কিন্তু তার বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মারধর করেছে- এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেধে তার স্বামী ও আত্মীয় স্বজনেরা মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কলেজছাত্রকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ 
বারের সামনে চুলোচুলি, ভাইরাল সেই ৩ নারী গ্রেপ্তার
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা
পর্নো তারকাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় ট্রাম্পের বিচার শুরু
X
Fresh