ইচ্ছে শক্তিই দিয়েছে জান্নাতুলের সাফল্য
খুব অল্প বয়সেই দেখতে হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ। মায়ের সঙ্গে ছোট্ট জান্নাতের আশ্রয় মেলে খালার বাসায়। তবে প্রতিকূলতা তার পিছু ছাড়েনি তখনো। মাত্র বছর দুইয়ের মধ্যে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত হারাতে হয় তাকে। তবে কোনও প্রতিকূলতায় দমাতে পারেনি তাকে অদম্য জান্নাতুলকে।
মায়ের স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষায় হাত হারিয়েও অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায় জান্নাতুল ফেরদৌস। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কতটা লড়াই সে করতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। হাতের কবজি দিয়ে লিখেই সে জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।
গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ফল। জান্নাতুল ফেরদৌস এবার আশুলিয়ার ডেন্ডাবর মতিউর রহমান উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে পাস করেছে।
মা নিলুফা বেগমের সঙ্গে জান্নাতুল ডেন্ডাবরে তার খালার বাড়ি থেকে পড়ালেখা করে। ২০১২ সালে বাবা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হলে মা তাকে নিয়ে খালার বাড়ি আশ্রয় নেন। তখন সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
মেয়ের সাফল্যে মা নিলুফা বেগম বলেন, ২০১৪ সালে তার মেয়ে জান্নাতুল দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে পা রেখেছিল। ওই বছর ১৫ জানুয়ারি গৃহশিক্ষকের বাসায় পড়তে গিয়ে এক ফাঁকে বান্ধবীদের সঙ্গে ছাদে যায়। হঠাৎ ছাদের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয় সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
সেখানে ২ মাস ১৮ দিন চিকিৎসার পর জান্নাতুল সুস্থ হয়। তবে পচন ধরায় এর আগেই তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
জান্নাতুলের মা আরও বলেন, মেয়ের দুই হাত কাটা পড়লেও সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থেকে সে দুই হাতের কনুই দিয়ে লেখার অভ্যাস করে। এভাবে লিখেই সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার আশা, মেয়ে পড়ালেখা করে চিকিৎসক হবে।
জান্নাতুল বলে, আমার মায়ের ইচ্ছা আমি বড় হয়ে চিকিৎসক হব। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও মা আশা ছাড়েননি। অনেক কষ্টের মাঝেও আমার পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। যদিও আমার হাত কাটা যাওয়ায় আমি বড় একটা ধাক্কা খাই। তারপরও কনুই দিয়ে লিখেই আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাই।
কারণ মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে আমাকে চিকিৎসক হতে হবে। এ জন্য পড়ালেখার কোনও বিকল্প নেই। আর মায়ের ইচ্ছে পূরণে আমি সকলের নিকট জান্নাতুল দোয়া চাই।
এজে
মন্তব্য করুন