• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভয়াবহ সংকটেও হবিগঞ্জ জেলায় শিশু ধর্ষণসহ ১১ হত্যাকাণ্ড

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ২৯ মে ২০২০, ০৯:০৫
11 murders including child rape Habiganj
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থায়ও হবিগঞ্জে থেমে নেই নৃশংসতা। জেলায় প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৪৫ দিনে শিশু ধর্ষণসহ ঘটেছে ১১ হত্যাকাণ্ড। ২০টিরও অধিক সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও সংঘর্ষের ঘটনায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে সচেতন মহল। ঘটনাগুলোর অধিকাংশই পারিবারিক এবং ছোট বিরোধকে কেন্দ্র করে। সেজন্য পুলিশের তেমন কিছু করার ছিল না বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের মীরনগর গ্রামে ক্রিকেট খেলা নিয়ে সংঘর্ষে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ওই ব্যক্তির বোন জুলেখা বেগম ও ভাগ্নে সোহেল মিয়াকে আটক করেছে। নিহত শুক্কুর আলী মীরনগর গ্রামের আ. হালিমের ছেলে।

এর আগে ২৬ মে বিকেলে সদর উপজেলার তিতখাই-কাশিপুর গ্রামে পতিত জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন কালা মিয়া (৬৫)। বুকে টেটাবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী এ তথ্য জানান।

একইদিন মাধবপুর উপজেলার আড়িয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আঘাতে মারা যান মর্তুজ আলী নামে এক ব্যক্তি। বিরোধের বিষয় ছিল জমি সংক্রান্ত। জানিয়েছেন মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন।

গত ২০ মে চুনারুঘাট উপজেলার বগাডুবি গ্রামে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে প্রতিপক্ষের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মারা যান রাব্বি নামে এক ব্যক্তি। আঘাতকারী ব্যক্তি ছিলেন মাদক ব্যবসায়ী। বিষয়নি আরটিভি অনলাইনকে নিশ্চত করেছে চুনারুঘাট থানা পুলিশ।

১৮ মে নবীগঞ্জ উপজেলার দেওপাড়ায় ৫০০ টাকার বিরোধকে কেন্দ্র করে সৈয়দ আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তার আপন ভাতিজা রুবেল। এরপর সংঘর্ষে আহতও হন কয়েকজন। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সাগর সরকার (১৮) নামে এক পিকআপ ভ্যান চালককে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গাড়ি ছিনতাই করেছে একটি চক্র। ঘটনার পাঁচ দিনপর মরদেহ উদ্ধার ও দুইজনকে আটক করে পুলিশ। আটক দুইজন হবিগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।

১৫ মে বানিয়াচং উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে বখাটে এক যুবক। ১৮ মে গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। ঘাতক রিংকু সরকার উপজেলার চিলারাই গ্রামের হগেন্দ্র সরকারের ছেলে। বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন আরটিভি অনলাইনকে জানান, ১৫ মে রাত আটটায় খেলাধুলার কথা বলে বাড়ির পূর্বপাশে ধানের খলায় নিয়ে সুবর্ণাকে ধর্ষণ করে রিংকু। পরে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তিনি দোষ স্বীকার করে।

১৭ মে মাধবপুর উপজেলায় মুফতি আব্দুল আহাদ (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে তার বড় ভাই ইদন মিয়া (৫০)। মোড়াশানী গ্রামে বাথরুম নির্মাণকে কেন্দ্র করে ইদন মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় তার ছোট ভাই আব্দুল আহাদের। একপর্যায়ে আহাদের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেন ইদন।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

১২ মে লাখাই উপজেলা মুড়িয়াউক ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে ২৫০ টাকার দেনা-পাওনাকে ঘিরে আপন চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন হন ইব্রাহিম মিয়া (৩৫) নামে এক যুবক।

লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম জানান, চাচাতো ভাই জাকারিয়ার বোনের কাছে ইব্রাহিমের ২৫০ টাকা দেনা ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জাকারিয়া ঘরে থাকা ফিকল (দেশীয় অস্ত্র) দিয়ে ইব্রাহিমের বুকে আঘাত করলে তিনি মারা যান।

গত ১০ মে লাখাই উপজেলার সাতাউক গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন ছফিল উদ্দিন (৩২)। টয়লেটের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ওইদিন সকালে চাচাতো ভাই হারুন ও মিজানের সঙ্গে বিরোধ হয় তার। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছফিলের বুকে টেটাবিদ্ধ হলে তিনি মারা যান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দেন।

১৯ এপ্রিল দিনগত রাত আটটায় খুন হন চুনারুঘাট উপজেলার আসামপাড়া এলাকার সজিব মিয়া নামে এক যুবক। একই এলাকার ফয়সলের সঙ্গে তার পূর্ব বিরোধ ছিল। এর জের ধরে ফয়সলের ছুরিকাঘাতে সজিব আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ তথ্য জানান চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হক।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের বাসিন্দা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, কেবল খুন নয়, যেকোনো ধরনের ঝগড়াঝাটিতে মানুষ লিপ্ত হয় যখন হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ে।

আর এসব হিতাহিত বা কাণ্ডজ্ঞানশূন্য লোকজনের কাছে করোনাই কি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগই কি আর ঈদই কি? যখন সমাজে অবক্ষয় নেমে আসে তখন মারামারি হানাহানি চরমে পৌঁছায়। কেবল হবিগঞ্জ নয়, বাংলাদেশের অনেক এলাকায়ই ঈদের প্রাক্কালে অনেকগুলো সংঘর্ষ ও প্রাণহানির খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার। তা হলো আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে কোনও লকডাউন হয়নি। যার প্রমাণ এসব সংঘাত ও হানাহানি। লকডাউন হলে মানুষ ঘরে থাকার কথা। হাটে মাঠে ঘাটে সংঘর্ষে জড়ানোর কথা না।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই পারিবারিক দাঙ্গা। আড়াইশ’ টাকার জন্যও খুন করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। অন্য এলাকায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চিন্তাও করা যায় না। যে কারণে বিষয়গুলো পুলিশের আগে থেকেই জানা ছিল না। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাঙ্গাবিরোধী ব্যাপক প্রচারাভিযান চলছে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জাতীয় পতাকার নকশাকারের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নেমে আর ফিরল না সোহান
পঞ্চগড়ে গাছের ডালের আঘাতে শ্রমিকের মৃত্যু
নবাবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
X
Fresh