সেই শিশুটিকে দত্তক নিলেন ঠিকাদার দম্পতি
মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিলেন নারায়ণগঞ্জের এক প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার।
গতকাল বুধবার বিকেলে প্রশাসনের সহযোগিতায় আদালতের মাধ্যমে তিনি শিশুটির দায়িত্ব নেন। তবে ঠিকাদার দম্পতির গ্রামের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের নরকলিকাতা গ্রামে।
শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া দম্পতি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তাদের নাম প্রকাশ ও ছবি না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গেল ১৬ মে রাত ১১টা ২০ মিনিটে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে জন্ম হয় কন্যা শিশুটির। শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন। নাম তার চায়না আক্তার (৩৪)। তিনি জানেন না তার স্বামীর পরিচয়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে ওই নারীকে ভোজেশ্বর এলাকার সড়কের পাশে অসুস্থ অবস্থায় দেখে স্থানীয় লোকজন নড়িয়া ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। পরে তারা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চারদিন পর বুধবার ভোরে কাউকে কিছু না বলে নবজাতককে ফেলে হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন ওই নারী।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও শরীয়তপুর আদালত সূত্র জানায়, শিশুটির দত্তক নেওয়ার জন্য চারটি দম্পতি ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তবে প্রশাসন ও আদালত নানা দিক চিন্তাভাবনা করে কন্যাশিশুটির ভবিষ্যৎ কথা বিবেচনায় রেখে সামর্থবান দম্পতি পরিবারের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বুধবার বিকেলে নারায়ণেগঞ্জের নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটির দায়িত্ব নেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য চারজন দম্পতি ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তবে আমরা চেয়েছি শিশুটির বাবাকে খুঁজে বের করতে। তাই অনেক এলাকায় খোঁজও নিয়েছি। অবশেষে সঠিক কোনও খবর না পেয়ে শরীয়তপুর শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আ. ছালাম খানের (জেলা জজ) মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের নিঃসন্তান এক সামর্থ্যবান দম্পতি তাদের সন্তান হিসেবে বাচ্চাটির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললে আদালতের মাধ্যমে ওই দম্পতির কাছে শিশুটিকে তুলে দেয়া হয়।
কন্যা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া দম্পতি বলেন, আমার পরিবারে সব আছে। কিন্তু আমাদের সংসারে আলো নেই। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পরেও কোনও সন্তানের বাবা হতে পারিনি। তবে এবার এই সন্তানের বাবা হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কিছুদিন পর সে আমাকে বাবা বলে ডাকবে। ওর মাকে মা বলবে। আমাদের স্বপ্ন তাকে মানুষের মতো মানুষ করার। কখনই বুঝতে দেব না তার ফেলে আসা করুণ এই দিনের কথা।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রূপা রায় জানান, গেল শনিবার রাত ১০টার দিকে নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজার সংলগ্ন নড়িয়া-শরীয়তপুর সদর সড়কে মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতি নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে মুঠোফোনে স্থানীয়রা তাদের জানান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও ভোজেশ্বর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থ ওই নারীকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাতৃসদন নামে (ভোজেশ্বর) একটি ক্লিনিকে ভর্তি করান। কিন্তু সেখানে ওই নারীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন।কিন্তু পরিচয়হীন। ওই নারী চার দিন হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের কাছে থাকলেও সন্তানের কোনও যত্ন নেননি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে কাউকে কিছু না বলে নবজাতক ফেলে হাসপাতাল থেকে চলে যান ওই নারী। তবে শুনে ভালো লাগলো এক দম্পতির মাধ্যমে কন্যাশিশুটি পরিচয় পেল।
জেবি
মন্তব্য করুন