• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনার প্রভাব: খাদ্যাভাবে বনের প্রাণী লোকালয়ে

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা, আরটিভি অনলাইন

  ০৩ মে ২০২০, ১১:০২
করোনার প্রভাব: খাদ্যাভাবে বনের প্রাণী লোকালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

চলমান করোনা প্রভাবে বনের ভেতরে পর্যটকের যাতায়াত কমে গেছে। তাই চরম দুর্ভোগে পড়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। অন্য সময়েও বনের প্রাণীরা লোকালয়ে আসতো তবে এ সময়ে তাদের আসাটা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মধুপুর বনের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বনের বানর-হনুমান, লহুরিয়ার হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তাই বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল সময়টায় মধুপুর বনে অসংখ্য পর্যটক আসা-যাওয়া করে। আগত পর্যটকরা খুব কাছাকাছি পেয়ে বানর-হনুমান, প্রজনন কেন্দ্রের হরিণগুলোকে কলা, বিস্কুট, চিপস, পাউরুটিসহ বিভিন্ন ধরনের বাড়তি খাবার দিয়ে থাকেন।

ভ্রমণ এলাকায় বানর হনুমানের উপযোগী ওই খাবার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে এ সময় ভাসমান দোকানিরাও আয় রোজগার করতেন। এবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে প্রশাসন থেকে এ বনে পর্যটক আসা-যাওয়ার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে করে মধুপুর বনের জাতীয় উদ্যান, দোখলা পিকনিক স্পট, লহুরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্র তথা চিড়িয়াখানাসহ দর্শনীয় স্থানগুলো একেবারে জন মানবশূন্য।

তাছাড়া বনের পশুদের জন্য সরবরাহ করা সরকারি খাবারও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এতে বনের পশু-পাখি তথা বানর-হনুমানগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা, জাতীয় সদর উদ্যান, চাড়ালজানী ও রসুলপুর রেঞ্জের আওতায় বানর-হনুমানের খাদ্য উপযোগী শাল-গজারী, কাইকা, সাইদা, আজুলী, জয়না, ভুতুম, কুম্বি, জিগা, সোনালু ও সেন্দুরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উজাড় হওয়ার কারণেও বানর-হনুমানের প্রাকৃতিক খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বানর হনুমানসহ পশু-পাখি ছুটাছুটি করছে।

সন্তোষপুর রাবার বাগানের কর্মচারী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বানর-হনুমান দেখার জন্য এ বনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শক আসতেন। তারা বানর-হনুমানগুলোকে কলা, কেক, বিস্কুট, পাউরুটি দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে লোকজন আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা বাড়তি খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বন এলাকার স্থানীয়রা আরও জানান, খাদ্যাভাবে বন থেকে প্রতিদিন দল বেঁধে বানর-হনুমানগুলো বেরিয়ে এসে আশপাশের আনারস, কলা ও সবজি বাগান তছনছ এবং বিভিন্ন ফল-ফলাদি সাবাড় করে ফেলে। আর এসব ফল-ফলাদি ও ফসল রক্ষার্থে অনেকেই বিষটোপ ব্যবহার করে থাকে। এতে অনেক বানর-হনুমান মারা যায়। বনের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক পারি দেয়ার সময় দ্রুতগামী যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

অরণেখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, মধুপুর বনাঞ্চলের বানর-হনুমান ও হরিণের জন্য সরকার প্রতিমাসে যে টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে তার কিছুটা হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে হয়ত ব্যবহার হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। আর বাকি বরাদ্দ বানর-হনুমানের জন ব্যয় করা হয় না। এ জন্যই অভুক্ত অবুঝ প্রাণীগুলো খাবারের সন্ধানে বন ছেড়ে লোকালয়ে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

মধুপুর বনের লহুরিয়া বিটের বিট কর্মকর্তা আ. জলিল জানান, টাঙ্গাইল বন বিভাগের আওতায় জাতীয় সদর উদ্যান, দোখলা ও চাড়ালজানী রেঞ্জে প্রায় ১০ হাজার বানর-হনুমান রয়েছে। এদের সরকারিভাবে টোকেন খাবার হিসেবে কলা, বাদাম ও বিস্কুট দেয়া হয়। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় চাহিদামত খাবার দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া করোনার কারণে পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় বাড়তি খাবারও পাচ্ছে না।

মধুপুর বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীর খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার উত্তম কুমার জানান, এ বনের বানর-হনুমানের খাবার সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে মাত্র ৯ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং লহুরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের জন্য ৩২ হাজার ৯৪০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।

মধুপুর বনের সহকারী বন সংরক্ষক জামাল হোসেন জানান, বনের বানর হনুমানসহ প্রাণিদের বরাদ্দ অনুযায়ী নিয়মিত খাবার দেয়া হয়। তারপরও এরা লোকালয়ে চলে আসে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘বুড়িগঙ্গায় জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই’
রমজানে প্রাণীদের জন্য জয়ার আর্জি
রহস্যজনক মৃত্যু পর্ন তারকা সোফিয়া লিওনের
উপকূলে বিপন্ন বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী, রক্ষায় নেই উদ্যোগ
X
Fresh