মৃত্যুর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তোহার সঙ্গে রানার সম্পর্ক কী ছিল !
আতঙ্কে আছে নিহত তানজিনা আক্তার তোহার পরিবার। মামলা দেয়া দূরে থাক মুখ খোলার সাহসও পাচ্ছে না তারা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তোহার মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। এরইমধ্যে তোহার ভাই ও এক বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে যে রানাকে ঘিরে ঘটনা তার ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে নীরব পুলিশ। তোহার প্রেমপ্রণয়ের ফিরিস্তি খুঁজে বের করতেই ব্যস্ত তারা।
গেল দুই এপ্রিল দিনগত রাতে আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম উত্তরপাড়ার স্টিলব্রিজ এলাকায় রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হয় তোহা। পরদিন সকালে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়াশুনা করতো বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এ ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে আখাউড়ায়।
স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান রানা খলিফার সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তোহার মৃত্যু এমন আলোচনা আখাউড়া জুড়ে। রানার সঙ্গে তোহার পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই রাতে রানা তার বাড়িতেও ছুটে গিয়েছিল।
রানা রাধানগর এলাকার দানিস খলিফার ছেলে। সে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। তবে এ বছরের ২৭ শে জানুয়ারি রানার বিরুদ্ধে নালিশ দিতে থানায় গিয়েছিল তোহা ও তার মা জোৎস্না বেগম। সে সময় থানায় সাংবাদিকের পেয়ে মা-মেয়ে রানার নির্যাতনের বর্ণনা দেন। রানার পরিবারের কাছে একাধিকবার নালিশ দেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তোহা। শেষবার নালিশ নিয়ে যাওয়ার পর রানার বড় ভাই তোহার চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল বলে তোহা জানান।
ওইদিন থানায় গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলু অভিযোগ দেয়া থেকে বিরত করেন তোহার পরিবারকে। ফলে রানার সঙ্গে তোহার সম্পর্কটা আসলে কি ছিল তা পরিষ্কার নয়। রানা তাকে উত্ত্যক্ত করতো নাকি নিজে বিয়ে করার পরও তোহার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তোহাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলো না। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, সত্য-মিথ্যা জানি না। মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পর মহিলাদের বলাবলি করতে শুনি নষ্ট করার পরও সে কেন তাকে বিয়ে করছে না এ নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।
তোহার ভগ্নিপতি আকরাম বলেন, তোহাদের বাড়ি কসবার ইমামবাড়িতে। বাসাবাড়ি বানিয়ে আখাউড়া বসবাস করলেও এখানে তাদের কেউ নেই। সে কারণেই তারা আতঙ্কে রয়েছেন হয়তো। ভয়ে মুখ খুলছেন না। তিনি বলেন, তোহা কেন মারা গেছে সেটি আল্লাহ জানে। এর আগে থানায় গিয়েছিল সে অত্যাচারের বিচার নিয়ে। আর এখন মারাই গেল।
তোহার মা জোৎস্না বেগম বলেন, রানা কেন তার মেয়ে যাদের সঙ্গে চলেছে সবার সঙ্গে বন্ধুর মতোই চলেছে। এর আগে রানা তার মেয়েকে বন্ধু হিসেবেই মেরেছে।
তোহার ছোট ভাই নওশাদ জানান, তোহা মারা যাওয়ার পর তার মার কথামতো পূর্ণিমা আপু (তোহার বান্ধবী) রানা ভাইকে ফোন দেয়। এরপর রাত তিনটায় রানা ভাই আসেন। দেখে বলেন এখন ‘ও’ মরছে কেন, তারপর দেয়ালে নিজের মাথা ঠোকান। এরপর পাগলের মতো চলে যান। তারপর থেকে তার ফোন বন্ধ।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমদ নিজামী বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তোহার ছোট ভাই ও এক বান্ধবীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে আত্মহত্যা করেছে এটা ঠিক। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসুক। কারো কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে এই প্রমাণ পেলে আমরা কাউকে ছাড়ব না।
জেবি
মন্তব্য করুন