করোনা: মানবেতর জীবন পার করছে উত্তরবঙ্গের দিনমজুররা
কাজের খোঁজে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজবাড়ীতে এসে আটকা পড়েছেন অর্ধ-শতাধিক দিনমজুর। যারা আশ্রয় আর কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভুগছে খাবার সংকটে। যারা বেশিরভাগই এসেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে।
দিনমজুরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের এ সময়টাতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে তেমন কোনও কাজ থাকেনা। যে কারণে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কাজের খোঁজে আসেন রাজবাড়ীতে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজবাড়ীর রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় তারা নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনে রাজবাড়ীতে আসেন। রেল স্টেশন এলাকা থেকে দিনচুক্তি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে তারা বিক্রি হয়ে চলে যায় কাজে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ায় এসব শ্রমিকেরা এখন বেকার।
তারা কাজ দূরের কথা, আশ্রয় ও খাবার সংকটে ভুগছে। বাস, ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা ফিরতেও পারছেন না বাড়িতে। অন্য সময়ে এসব শ্রমিকেরা রেল স্টেশনে রাত কাটানোর সুযোগ পেলেও এখন সে সুযোগও নেই।
আজ রোববার দুপুরে রাজবাড়ী রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাপড়ের পোটলা অথবা ব্যাগ হাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। স্টেশনের বাইরে বসে থাকা চার শ্রমিককে ডেকে প্লাটফর্মে এনে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
জয়পুরহাট জেলার কুসুমমারা গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান জানান, সংসারে তার মা, স্ত্রী, ও তিন ছেলে মেয়ে আছে। তার একার আয়ে চলে সংসার। আটদিন আগে তিনি নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনে রাজবাড়ীতে এসেছিলেন কাজের খোঁজে। কাজ পেয়েছিলেন। দিনচুক্তি ৪০০ টাকায় পাঁচদিন কাজ করে যা পেয়েছিলেন তার বেশিরভাগ টাকা বিকাশ করে করে বাড়ি পাঠিয়েছেন। এখন পকেটে যা আছে তা দিয়ে বড়জোর একদিন চলতে পারবেন। কিন্তু খাবার পাবেন কোথায়? সব রেস্তোরাঁ বন্ধ।
ঘুরে ফিরে দোকান খোলা পেলে রুটি, পাউরুটি, বিস্কুট যা পাচ্ছেন তা দিয়ে কোনরকমে চলে যাচ্ছে। রাতে থাকার জায়গা পাচ্ছেন না।
আতাউরের মত তাহের ও আসাদুর জানালেন একই রকম কথা। জানালেন, বাড়ি ফেরার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠছে।
রেলস্টেশনের পান দোকানী মানিক ও পত্রিকা বিক্রেতা মিঠু জানান, রাতে ভাসমান শ্রমিকরা আসে থাকার জন্য। কিন্তু এখন তাদেরকে থাকতে দেয়া হচ্ছে না।
রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি আকবর হোসেন জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কাউকে রেল স্টেশনে থাকতে দেয়া হচ্ছে না।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এজে
মন্তব্য করুন