• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গ্রাহকের কণ্ঠ শুনলেই বিকাশে টাকা দিতে পারেন জন্মান্ধ মিজানুর

কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ০৩ মার্চ ২০২০, ১৫:২৩
মিজানুর দোকান অন্ধ
নিজ দোকানে বসে আছেন মিজানুর রহমান

কণ্ঠ শুনে কিংবা ফোন নাম্বারের শেষের -৩টি ডিজিট বললেই পুরো মোবাইল নাম্বর বলে দিতে পারেন জন্মান্ধ মিজানুর রহমান অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান এই মিজানুরের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম টাঙ্গারিপাড়ায়

তিনি কৃষক মনতাজ আলী এবং মমিনা বেগম দম্পতির ছেলে জন্ম থেকে দুই চোখ অন্ধ মিজানুরের বর্তমানে তার বয়স ২২ বছর দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে ছোট বড় বোন মরিয়মের বিয়ে হয়ে গেছে

মিজানুর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও অন্ধত্বের কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি অভাবের সংসারে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরতে ২০১৭ সালে ফ্লেক্সিলোডের দোকান দেন এই ব্যবসা দিতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা বিড়ম্বনার স্বীকার হলেও এখন আর কোনও সমস্যা হয় না মিজানুরের সে এই কয়েক বছরে তার মেধাশক্তি দিয়ে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ, রকেটসহ টাকা লেনদেন করার পাঁচ হাজার মোবাইল নম্বর মুখস্থ বলতে পারেন

এর মধ্যে মিজানুর তিন হাজার মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তির নাম এবং কণ্ঠ শুনে অথবা শেষের -৩টি ডিজিট বললেই পুরো ফোন নাম্বার বলে দিতে পারেন আশ্চার্যজনক হলেও সত্যি মিজানুরের দোকানে কেউ একবার ফ্লেক্সিলোড অথবা টাকা লেনদেন করলেই সেই নাম্বারটিও মুখস্থ রাখতে পারেন এলাকার পরিচিত মানুষের সকল মোবাইল নম্বর এবং যারা একবার লেনদেন করেছেন তাদের ফোন নাম্বার অনায়াসে বলতে পারেন মিজানুর

মিজানুর রহমান জানান, শুরুতে কিছুটা সমস্যা হতো কিন্তু এখন আর হয় না চোখে না দেখলেও কোন বাটনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের ওপর হাত রেখে বলে দিতে পারি ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে ফ্লেক্সি লোড করার ক্ষেত্রে মোবাইলে কোন বাটন টিপতে হবে, কোন অপশনে যেতে হবে-সেটাও বলতে পারি এতে আমার কোনও সমস্যা হয় না বিকাশে (ব্র্যাক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) বা রকেটে (ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিং) টাকা পাঠাতে কোনও সমস্যা নেই শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হট লাইনে কথা বলে নিশ্চিত কিংবা অন্য কারও সহযোগিতা নিতে হয় মিজানুর আরও বলেন, দোকান ঘরের ভাড়া নেয় না মালিকপক্ষ টাপুরচর বাজারে প্রায় -১০টি ফ্লেক্সিলোডের দোকান রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষজন আমার দোকান থেকে মোবাইলে লেনদেন করে থাকে এতে করে দিন -৪শটাকা আয় হয় এই দিয়ে অতিকষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করছি অর্থ সংকটের ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধি করতে পারছেন না বলেও জানান মিজানুর

বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন, শামীম, সাইফুল, ফিরোজ বলেন, মিজানুরের শ্রবণশক্তি খুবই শক্তিশালী সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই ফ্লেক্সিলোডের দোকান করছে গ্রাহকদের সঙ্গে টাকা লেন-দেনে কোনও ঝামেলার ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি ফ্লেক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে তার মোবাইল নম্বর তার লিখতে হয় না আমরা নিয়মিত তার দোকান থেকেই মোবাইলে লেনদেন করি

দোকানের ঘর মালিক চাঁন মিয়া জানান, যখন জানতে পারি দরিদ্র পরিবারের অন্ধ ছেলে মিজান ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতে পারবে তখনি আমি তাকে একটি ঘর দেই কোনও জামানত ছাড়াই ঘরটি তাকে ভাড়াবিহীন দিয়েছি সে যতদিন ব্যবসা করবে ততদিন আমি তার কাছ থেকে কোনও প্রকার ভাড়া বা টাকা-পয়সা নেব না

মিজানুরের বাবা মনতাজ আলী বলেন, আমার এক ছেলে এক মেয়ে এরমধ্যে মিজানুর বলতে গেলে জন্ম থেকেই অন্ধ অভাবের সংসারে মিজানের চিকিৎসা করার জন্য উলিপুর, রংপুর দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে মিজানের অপারেশন করাতে পারিনি বর্তমানে ১০ শতক বাড়িভিটা ছাড়া আমাদের কিছুই নেই এই জমির মধ্যেও ছয় ভাইয়ের অংশ রয়েছে তিনি ছেলের দুই চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চান

বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন আরটিভি অনলাইনকে জানান, এই বিষয়টি আমার জানা নেই তবে খোঁজ-খবর নিয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরান জানান, আমি সামাজিক মাধ্যমে মিজানুরের বিষয়টি জানতে পেরেছি খোঁজখবর নিয়ে মিজানুরের জন্য সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করব

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘দাদাগিরি’, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর শুটিং সেটে ভয়াবহ আগুন
রেমিট্যান্সে শীর্ষে ঢাকা, পাঁচ নম্বরে নোয়াখালী
মোবাইলে এক মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অন্ধকার ভেদ করে আলোর বার্তা
X
Fresh