দুই বছরেও স্বাভাবিক হয়নি হিলি রেলস্টেশনের কার্যক্রম (ভিডিও)

ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। এই বন্দরের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ হিলি রেলস্টেশনটি এখন লোকবলের অভাবে দুই বছর ধরে চলছে ক্লোজ ডাউন অবস্থায়।

২০১৮ সালের জানুয়ারির সাত তারিখে জনবল সংকট দেখিয়ে এ স্টেশনে বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি। মাস দুয়েক আগে একজন সহকারী মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান দিয়ে শুরু করা হয় এই স্টেশনের কার্যক্রম। এই রুটে আন্তঃনগরসহ ১০টি ট্রেন চলাচল করলেও থামে মাত্র তিনটি ট্রেন। তাও আবার দুই নম্বর লাইনে। এতে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামা করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আধুনিকায়নসহ সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি দ্রুত কার্যকর করা হবে জাতীয় সংসদে রেলমন্ত্রীর এমন আশ্বাসের পরেও আজও চালু হয়নি স্টেশনটি। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ী, কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক, ভৌগলিক ও ব্যবসায়ী কারণে নির্মিত হয় ‘বি’ শ্রেণির হিলি রেলস্টেশন। এ ধরনের স্টেশনে তিনজন মাস্টার, পাঁচজন পয়েন্টম্যান, তিনজন বুকিং সহকারী এবং দু’জন পোর্টার থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু হিলি রেলস্টেশনে বর্তমানে রয়েছে মাত্র একজন পয়েন্টম্যান ও একজন বুকিং সহকারী। তারা স্টেশনের যন্ত্রপাতি এবং রেলক্রসিং পাহাড়া দিচ্ছেন।

হিলি রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, রেল স্টেশনটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। নেই কোনও যাত্রী ছাউনি, টয়লেট, যাত্রীদের বসার আসন। হিলি রেলস্টেশন দিয়ে প্রতিদিন রাজশাহীগামী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস এবং খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেন যাত্রা বিরতি করে। এছাড়া এ পথ দিয়ে প্রতিদিন আরও ১০টি ট্রেন যাওয়া আসা করে।

বর্তমানে হিলি স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেন দুই নম্বর লাইন দিয়ে চলাচল করছে। ব্রিটিশ আমলে এই রেলস্টেশনে দিল্লি এক্সপ্রেসসহ সকল ট্রেনের স্টপেজ থাকলেও এখন থামে মাত্র তিনটি ট্রেন। তাও আবার একমুখী। এখানে রয়েছে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দর।

প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্য পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারসহ আমদানি রপ্তানি কাজে হিলিতে আসতে হয় হাজারো মানুষকে। আর এ মানুষগুলোর একমাত্র নিরাপদ যাতায়াতের রুট রেলপথ।

সরকার হিলি স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও আজও অবহেলিত এই হিলি স্টেশনটি। বর্তমানে দিনাজপুর-ঢাকাগামী সকল ট্রেন চলাচলের একমাত্র রুট এটি। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ট্রেন চলাচল করে হিলি রেলস্টেশনের ওপর দিয়ে। সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান উৎস হিলি স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন।

বাসে বেশি ভোগান্তির কারণে যাত্রীরা ট্রেন রুটকে বেশি পছন্দ করে। এজন্য ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও এলকাবাসী স্টেশনটির অবকাঠামো উন্নয়ন ও সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি চান।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হিলি রেলস্টেশনে নেমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর পদচারণ রয়েছে সেই স্টেশন আজও অবহেলিত। এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের দপ্তরে বার বার যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে জানান, হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত।

হিলি একটি ব্যবসাবান্ধব এলাকা। হিলি রেলস্টেশনটি হঠাৎ বন্ধ হওয়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে। যদি স্টেশনটি চালু হয় তবে সরকারের রাজস্ব যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এলাকার অনেক উন্নতি হবে বলে মনে করেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

এদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে হিলি রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী বলছেন, স্টেশন মাস্টার না থাকায় প্লাটফর্ম ছেড়ে দুই নম্বর লাইনে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে জনবল না থাকায় স্টেশনের যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জেবি