• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

চোরা কারবারিদের অমানবিকতায় নদীতে মারা পড়ছে অসংখ্য গরু

আব্দুল কুদ্দুস, কুড়িগ্রাম (উত্তর) থেকে

  ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:১৯
চোরা কারবারিদের অমানবিকতায় নদীতে মারা পড়ছে অসংখ্য গরু
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় নদীর পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে অসংখ্য গরু। ছবি: আরটিভি অনলাইন

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরা কারবারিদের অমানবিকতায় নদীর পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে অসংখ্য গরু। আর এসব মরা গরু বাংলাদেশের অভ্যন্তরের চরে আটকা পড়ে নদীর পানি ও পরিবেশ দূষিত করছে। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের যাত্রাপুর এলাকার বিভিন্ন ডুবোচরে শতাধিক মরা গরু আটকা পড়ায় চোরাকারবারীদের অমানবিকতা এবং নির্মমতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের পূর্বভাগে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ী জেলার সীমান্ত। আর এ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছ ব্রহ্মপুত্র নদ ও গংগাধর নদী। অভিন্ন স্রোত প্রবাহ থাকার সুবাদে গরু চোরা কারবারিরা এই নদীটি ব্যবহার করে থাকেন। ভারতের দিক থেকে চোরাকারবারীরা গরুর চার পা এবং মুখ বেঁধে কলাগাছের সাথে স্রোতে ভাসিয়ে দেয়। রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের এপারে থাকা চোরাকারবারীরা তা ধরে থাকে। দৃষ্টির অগোচরে থাকা গরু ধরতে না পারায় মারা পড়ে।

সীমান্তের লোকজন জানায়, বর্তমানে দু’দেশের সীমান্তে নজরদারি বাড়ায় চোরা কারবারিরা গরু পাচারে বেছে নিয়েছে এই ভিন্ন কৌশল। তারা রাতের অন্ধকারে পা বাঁধা গরু কলাগাছ অথবা কাশখড়ের ভেলার সঙ্গে ৮-১০টি করে একত্রে ভাসিয়ে দিচ্ছেন ব্রহ্মপুত্রের এবং গংগাধরের পানির স্রোতে। এতে করে গত এক মাস ধরে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসা গরুর মধ্যে শত শত গরু মারা পড়েছে। মারা যাওয়া এসব গরুর বেশির ভাগ আটকা পড়ে আছে কুড়িগ্রামের ব্রক্ষপুত্র নদের চরে। দূষিত হয়ে পড়েছে নদের পানিসহ পরিবেশ।

এই অমানবিক দৃশ্য কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রারপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডুবোচরের। নদের বুকে জেগে ওঠা ১০ থেকে ১২টি ডুবোচরে পড়ে আছে শতশত মৃত গরু। বেশি লাভের আশায় ভারতীয় চোরাকারবারীরা ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ ভারতের কালাইয়ের চর উজান থেকে বাংলাদেশি চোরাকারবারীদের কাছে স্রোতে ভাসিয়ে দেয় এসব গরু। রাতের অন্ধকার এবং ঘন কুয়াশায় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। কিছু গরু এদেশের চোরাকারবারীরা ধরতে পারলেও দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া গরুগুলো অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং খাবারের অভাবে মারা পড়ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর, চিরা খাওয়া, ঝুনকার চর, অষ্টআশির চর, রলাকাটার চরসহ বেশকিছু চরে ঘরে দেখা গেছে নদের দুই পাড়ের এসব ডুবোচরের কোনটিতে ৪০টি, কোনটিতে ২০টি, কোনটিতে ১০টি কোনটিতে ১৫টি এভাবে অগণিত মৃত গরু পড়ে আছে। এসব গরুর কোনও কোনটির চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে স্থানীয় মুচিরা।

চর যাত্রাপুরের নৌকার মাঝি মো. কোবাদ মোল্লা জানান, চর যাত্রাপুরের ডুবোচরে গত চার-পাঁচ দিনে মৃত ৯টি গরু আটকা পড়েছে। উজানের চরগুলোতে আরও অসংখ্য মৃত গরু আটকে আছে।

একই এলাকার নৌকার আরেক মাঝি মো. শাহ্ আলম মিয়া জানান, আগে কাঁটাতারের উপর দিয়ে চাঙ্গে করে গরু পাচার হয়ে আসতো। এখন কড়া পাহারা ও বিএসএফ-এর গুলির ভয়ে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতের উজান থেকে গরুর পা বেঁধে কাশিয়ার বোঝার মধ্যে বেঁধে রাতে কুয়াশার মধ্যে নদের পানির স্রোতে ছেড়ে দিয়ে গরু পাচার করছে চোরাকারবারীরা। এসব গরুর যেগুলো বাংলাদেশের চোরাকারবারীরা ধরতে পারছে সেগুলো বেঁচে যাচ্ছে। আর যেগুলো ধরতে পারছে না সেগুলো পানিতে ডুবে ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছে। এই মৃত গরুগুলো স্রোতে ভেসে এসে ডুবো চরে আটকা পড়ছে।

চর ভগবতী পুরের জলিল মোল্লা জানান, তার বাড়ির পাশের দুটি ডুবোচরে শতাধিক মৃত গরু পড়ে আছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মরা গরু পচে পানি যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মারাত্মক দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। আগে নদীর পানিতে গোসলসহ বিভিন্ন কাজ সারলেও এখন নদের পাড়েই আসা যাচ্ছে না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০-১২টি ডুবোচরে অসংখ্য মৃত গরু আটকা পড়ে আছে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমন অমানবিকভাবে গরুর পা বেঁধে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে গরু পাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মৃত গরুগুলো অপসারণ করে পরিবেশ রক্ষারও দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি’র পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারির মাঝেও নদী পথে ভিন্ন কৌশলে দু’দেশের চোরাকারবারীরা গরু পাচার করায় অনেক গরু মারা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, এমন নির্দয়ভাবে গরু পাচার ও গরুর মৃত্যুর ঘটনাটি শুনেছি। এ ব্যাপারে গরুপাচার রোধের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এজে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh