গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার নাম করে লুটপাটই ছিল তাদের পেশা
টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর কামাল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডের প্রায় আড়াই মাস পর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
গেল রোববার টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আকরামুল ইসলামের কাছে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার নারকেলি গ্রামের মোসলেম মিয়ার ছেলে কাউছার আহমেদ (৩৫), সাকরাইল গ্রামের ইসমাইল হাউলাদের ছেলে মাইনুল ইসলাম সুমন (৩০) ও ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের ইটখোলা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে মামুন মিয়া (৩২)।
গতকাল সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় তার সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে জানান, গেলো বছরের সাত নভেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল- বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর উপজেলার বাইমাইল এলাকায় অজ্ঞাত একটি মরদেহ পাওয়া যায়। পরে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসে। এ সময় মরদেহের পাশে একটি মোবাইল নম্বরসহ চিরকুট পাওয়া যায়। ওই চিরকুটের সূত্র ধরেই নিহত ওই ব্যক্তির ছেলে কামরুজ্জামান মির্জাপুর থানায় এসে মরদেহ তার বাবা কামাল হোসেনের বলে শনাক্ত করেন। তার বাড়ি পাবনা জেলার ইশ্বরদী উপজেলার রূপপুর জিগাতলা মোড়ে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, উদ্ধার হওয়া চিরকুটে একটি নাম্বারের সূত্র ধরে তদন্ত কাজ চালানো হয়। তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, সাভারের হেমায়েতপুরে বসবাসকারী কাউছার নামের এক ব্যক্তি ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। পরে তাকে গেল শুক্রবার হেমায়েতপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মাইনুল সুমনকে মিরপুর থেকে গেলো শনিবার ও রোববার ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেলোয়ার নামে আরও একজন জড়িত রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে।
আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জানিয়েছেন, তারা বিগত ১০ বছর ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে প্রাইভেটকার নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে গাড়িতে উঠিয়ে ওই যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে মহাসড়কের ফাঁকা নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। একইভাবে কামাল হোসেনকে গাজীপুর থেকে ইশ্বরদী নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। মির্জাপুরের কাছে এসে তার কাছ থেকে নগদ এক হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সে বাঁধা দিলে তাকে পেছন থেকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বাইমাইল এলাকায় ফেলে দেয়। এই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তারা বিগত দিনে বহু যাত্রীদের নগদ টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ফোন লুট ও মারধর করে অজ্ঞান করে প্রাইভেটকার থেকে ফেলে দিয়েছে।
জেবি
মন্তব্য করুন