• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ফের কমলার চাষ করতে চায় সিলেটের কৃষক

হোসাইন আহমদ সুজাদ, সিলেট, আরটিভি অনলাইন

  ২০ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৫০
কমলা চাষি সিলেট
ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় সিলেটে প্রচুর কমলার চাষ হতো। বর্তমানে সিলেটে কমলার চাষ নেই বললেও চলে। চীন, ভারত, ভুটান, নেপালসহ বিদেশের কমলা দখল করেছে দেশের বাজার।

সিলেটের পাহাড়, টিলার মধ্যে কমলার চাষ বাড়াতে ২০০১ সালে ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প’ গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আট বছরের ওই প্রকল্প শেষে এই অঞ্চলে কমলার চাষ বেড়ে যায় দিগুণ। তবে এরপর বন্ধ হয় কমলা চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ। ১১ বছর পর আবার সিলেটের কমলার প্রতি মনোযোগী হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। নেওয়া হয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদী আরেকটি প্রকল্প।

জানা যায়, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

প্রথমটির মতো দ্বিতীয়টির প্রকল্পও সফল হলে সিলেটের কমলার সুদিন আবার ফিরে আসবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

চা ছাড়াও পাহাড়-টিলার মাটিতে ভালো ফলনের জন্য চায়ের দেশের পাশাপাশি সিলেট এক সময় কমলার দেশ বলেও পরিচিত পায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজারের জলঢুপ এলাকার কমলার খ্যাতি ছিল দেশের বাইরেও। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, বৈরী আবহাওয়া, পাহাড়ি জমি ক্রমেই কমে আসা প্রভৃতি কারণে কমে আসতে থাকে সিলেটে কমলার উৎপাদন। কম মূল্যে পাওয়ায় বিক্রেতারা ঝুঁকে পড়েন বিদেশি কমলার প্রতি। দেশি কমলার দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় পাইকারি বিক্রেতারাও কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নেন সিলেটের কমলা থেকে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় সিলেটের কৃষকরাও কমলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

২০০১ সালে ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামে আট বছর মেয়াদি এক প্রকল্পের মাধ্যমে চার জেলায় ২৫০টি বাগান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়া পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের জুন মাসে এসে শেষ শেষ হয় এ প্রকল্পের মেয়াদ। ২০০১ সালে সিলেট বিভাগে যেখানে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হতো সেখানে ওই প্রকল্পের ফলে বর্তমানে কমলা চাষ হচ্ছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। ২০০৮ সালে কৃষকদের দাবি সত্ত্বেও ওই প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। দীর্ঘদিন এ নিয়ে ছিল না কোনও উদ্যোগও। ফলে আবার নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন চাষিরা।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের গৌরাবাড়ী গ্রামের কমলা চাষি গুণেন্দ্র দেব। বাগানে প্রায় একশটির মতো গাছ রয়েছে তার।

তিনি বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছি। সরকারি প্রণোদনা বা ঋণের সুবিধা পেলে বাগানে আরও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর সিলেটে কমলা চাষ বৃদ্ধিতে আবার উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

২০১৯ সালে কমলাসহ সিলেট অঞ্চলের লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’ নামে ওই প্রকল্পর মাধ্যমে সিলেট ও মৌলভীবাজারের নয় উপজেলায় কমলার উৎপাদন বাড়াতে কাজ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া- এই নয় উপজেলায় প্রকল্পের কাজ চলবে।

এসব উপজেলায় কমলাসহ লেবু জাতীয় ফল সবচেয়ে বেশি ফলন হয়।

কমলা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কমলার নতুন বাগান সৃষ্টি, পুরাতন বাগান ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৫-২০শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের কৃষকরা।

এ লক্ষ্য পূরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তারা। এছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজারের দুই হার্টিকালচার সেন্টারে উন্নতমানের চারা উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিলেট এম এম ইলিয়াস আরটিভি অনলাইনকে জানান, সিলেট অঞ্চলে কমলার উৎপাদন বাড়াতে আগের প্রকল্পে অনেক সুফল মিলেছে।এরপর দীর্ঘদিন এ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নতুন প্রকল্পে কমলার সঙ্গে লেবুজাতীয় অন্যান্য ফল উৎপাদন বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনও চেষ্টা করলে সিলেটের কমলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাষিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রীর সফরে চোখ সবার
কমলা রঙের মেঘে ঢেকে গেছে গ্রিসের আকাশ
সিলেটে পাওয়া যাবে আইসিসি অনুমোদিত বাংলা ব্যাট
সকাল ৯টার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
X
Fresh