• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ধনু নদীতে ঘের দিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট

নেত্রকোনা প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৪৭
ধনু নদী খালিয়াজুরী
নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদীতে অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ ধরছেন প্রভাবশালীরা

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদীতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ ঘের দিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা।

বাঁশ আর গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি অবৈধ এসব ঘের স্থাপনের ফলে একদিকে কার্গো, বোলগেট ও অন্যান্য নৌযান চলাচলে বিঘ্নঘটাসহ প্রায়ই ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। অন্যদিকে প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছে উন্মুক্ত এ নদীর মাছ ধরার অধিকার থেকে। তাছাড়া, ঘের স্থাপনের ফলে ঘেরে বালি আটকে নদীটি ভরাটও হচ্ছে দ্রুত।

ঘের সরাতে ঘের মালিকদের উদ্দেশে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী গ্রামসমূহে প্রায় দু’মাস আগে মাইকিংও করা হয়েছে। তবু ওই মালিকরা তাদের ঘের তুলে নিচ্ছেন না।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে খালিয়াজুরীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদুল আহমেদ আরটিভি অনলাইনকে জানান, খালিয়াজুরীর লেপসিয়া থেকে পাঁচহাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার ধনু নদীতে শতাধিক ঘের রয়েছে। ওই ঘের স্থাপনকারী ৩৬ জনের নামও ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। নাম না জানাও আছেন অনেকেই। ঘের স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি আরও জানান, এ যাবত ধনু নদীতে টানা ১৩ দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে অবৈধ ঘের স্থাপনকারী সাতজনকে ধরে প্রায় চার লাখ টাকা দণ্ড আদায়সহ ৩০-৩৫টি অবৈধ ভিম জাল আর ১০-১৫টি মশারি জাল কেটে ও পুড়িয়ে অপসারণ করা হয়েছে।

ওই দণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম হলেন, উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের খাইরুল ইসলাম (৪০) ও ফতুয়া গ্রামের মারাজ আলী (৪৫)।

এদিকে, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অজিত সরকার আরটিভি অনলাইনকে জানান, প্রতি বছরেই প্রাকৃতিকভাবে কোটি টাকার মাছ উৎপাদনের খনি হিসেবে পরিচিত এ নদী জেলেদের আশির্বাদে পরিণত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীটিকে ঘিরে স্থানীয় জেলেদের তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। নদীটিতে কিছু প্রভাবশালী অমৎস্যজীবী অবৈধ ঘের তৈরি করে ও চুঙ্গা (বাইম মাছ ধরার বাঁশের ফাঁদ) দিয়ে মাছ শিকার করায় জেলেরা ওই ঘের আর চুঙ্গার আশেপাশেও ঘেঁষতে পারেন না। যদি ভুলেও ওই ঘের কিংবা চুঙ্গার পাশে কোনও জেলে জাল নিয়ে যায় তবে তার খেসারত দিতে হয় প্রভাবশালীদের লাঠিপেটা খেয়ে অথবা জাল নৌকা দিয়ে।

খালিয়াজুরী সদরের নয়াপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য জেলেরা জানান, ধনু নদী জবরদখলকারী এসব প্রভাবশালী অমৎস্যজীবীদের অধিকাংশই হলেন বর্তমান সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মী। ওরা ঘের স্থাপনে কেউ আছেন সরাসরি, কেউবা রয়েছেন নেপথ্যে সম্পৃক্ত।

অবশ্য, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয় দখলদারের। কিন্তু পরিবর্তন হয় না শুধু অধিকারবঞ্চিত জেলেদের বঞ্চনার।

নয়াপাড়া গ্রামেরই বাসিন্দা শৈলেন বর্মন (৩৫) ও সুশীল দাস (৩২) বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এ নদীটিকে অবৈধ ঘের ও চুঙ্গার আওতায় রাখছে প্রভাবশালীরা। এ মৌসুমে এখানে মাছ ধরতে গেলেই ওই প্রভাবশালীদের হাতে জেলেরা নির্যাতনের শিকার হন। তারা নিজেরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান শৈলেন ও সুশীল।

তারা আরও জানান, ‘জাল যার জলা তার’ নীতি থেকে বঞ্চিত হয়ে পূর্ব পুরুষের পেশা মাছ ধরতে না পেরে নদীর তীরবর্তী এ গ্রামের ক্ষিতিন্দ্র বর্মণ, পরিমল বর্মণ, রাখাল বর্মণ, অরুণ বর্মণসহ প্রায় অর্ধশত লোক পরিবার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকায়।

এসব ব্যাপারে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে জানান, ধনু নদী থেকে দ্রুত ঘের উচ্ছেদের মাধ্যমে জেলেদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ এখানে নির্বিঘ্নে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। ওই ঘের উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আনসার ব্যাটেলিয়ান চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাটিলিয়ান এলেই শুরু হবে ঘের উচ্ছেদে অভিযান।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নেমে আর ফিরল না সোহান
দ্রুত সময়ের মধ্যে মুজিবনগরে স্থলবন্দর হবে : জনপ্রশাসনমন্ত্রী 
যমুনা নদী‌তে অষ্টমীর স্না‌নে পুণ্যার্থীদের ঢল
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
X
Fresh