• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় মরতে হলো আকলিমাকে

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ০২ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৪৬
প্রেমিক ঘাতক মৃত্যু
ঘাতক প্রেমিক আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়া

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভেড়িখাল থেকে উদ্ধার আকলিমা আক্তার (২৫) নামে এক যুবতির মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

নিহত আকলিমা তার পরকীয়া প্রেমিককে বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় ওই প্রেমিক তাকে হত্যা করেছে।

গতকাল বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে নিহত আকলিমার পরকীয়া প্রেমিক আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়ার আব্দুল আহাদের ছেলে। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোবহানের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী জানান, আকলিমা আক্তারের সঙ্গে ৭-৮ মাস আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়ার পরিচয় হয়। সোবহান মিয়া পেশায় ফার্নিচারের কাঠমিস্ত্রী এবং বিবাহিত। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীকে গেল ৬-৭ মাস আগে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর আকলিমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রতিদিন কথাবার্তা চলতো সোবহান মিয়ার। তবে তার স্ত্রী থাকার বিষয়টি আকলিমার কাছে গোপন রাখে সোবহান। মাঝে মধ্যে দুজনের মধ্যে ঢাকায় দেখা সাক্ষাত হতো।

একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হয়। চার মাস ধরে তাদের মধ্যে চলে শারীরিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সফলতার জন্য আকলিমা সোবহানকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু সোবহান তাকে বিয়ে না করে বিভিন্ন কৌশলে সময় অতিবাহিত করে। এ অবস্থায় সোবহান আকলিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গেল চার মাস আগে আকলিমা গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য ঢাকার গাজীপুরে চলে যায়। গেল ২৩ ডিসেম্বর সোবহান মোবাইলে ফোন করে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আকলিমাকে হবিগঞ্জ আসতে বলে।

তার কথামতো আকলিমা ওইদিন ঢাকার টঙ্গী থেকে এনা পরিবহনের একটি বাসে এসে সন্ধ্যায় অলিপুরে নামে। আগে থেকে অপেক্ষমান সোবহান মিয়া আকলিমাকে গোপনে নিজ বাড়িতে নিয়ে রাখে। নিজ কক্ষে আকলিমাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো রাত কাটায়। পরদিন ২৪ ডিসেম্বরও আকলিমাকে তার ঘরে রাখে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করায় তখনো বিয়ের জন্য সোবহানকে চাপ সৃষ্টি করে আকলিমা। কিন্তু সোবহান বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে যায়। পরে গেল ২৫ ডিসেম্বর ফজরের নামাজের সময় সোবহান আকলিমাকে বিয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আকলিমা তার কথায় বিশ্বাস করে বাড়ির পাশের হাওর দিয়ে যাওয়ার সময় খালের পাড়ে আকলিমাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সোবহান। পরে মরদেহ সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় সে।

ওসি আরও জানান, আকলিমাকে হত্যার পর সোবহান মরদেহ রেখে বাড়িতে চলে আসে এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে থাকে। গেল ২৫ ডিসেম্বর রাতে সদর থানা পুলিশ আকলিমার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করে। মরদেহটি উদ্ধার হওয়ার পরই সন্দেহ হয় এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এরপর এনা বাসের টিকেট ও কল লিস্টের সূত্র ধরে ঘাতক সোবহানকে শনাক্ত করে পুলিশ। তিনি আরও জানান, ঘাতক নিজেই তার দোষ স্বীকার করেছে। অচিরেই তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

প্রসঙ্গত, গেল ২৫ ডিসেম্বর রাতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভেড়িখাল থেকে অজ্ঞাত এক যুবতির (২৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর পুলিশ তার ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় দিলে স্বজনরা এসে তার মরদেহ শনাক্ত করে। নিহত আকলিমা আক্তার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার জাম্বুরাছড়ার হেলাল মিয়ার মেয়ে। পরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমির উদ্দিন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নান্দাইলে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
ইসরাইলি গণহত্যাকে সুরক্ষা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হামাস
মাথায় গুলি চালিয়ে আনসার সদস্যের আত্মহত্যার অভিযোগ
লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা কারাগারে
X
Fresh