• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

৩৮ বছর পর শ্রীমঙ্গলে রেলের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার

  ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৫১
৩৮ বছর পর শ্রীমঙ্গলে রেলের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার
৩৮ বছর পর শ্রীমঙ্গলে রেলের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর রেলের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করেছে রেল বিভাগ।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযানে রেল ও জেলা পুলিশের শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ২টি বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এতে শহরের প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ভানুগাছ সড়কের মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারি প্রকল্প, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘পাঁচ ভাই’, গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম, ফার্নিচারের শো-রুম, সেলুন, চা পাতার দোকান, বাসা বাড়ি, ভ্যারাইটি স্টোর, ফার্মেসি, হার্ডওয়্যারের দোকান, ওয়ার্কশপ, ট্রান্সপোর্ট অফিসসহ শতাধিক পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার-ঢাকা নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (রেল) মইনুদ্দিন আহমেদ, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা, জিআরপি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আলমগীর হোসেন, রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শ্রীপদ এসময় উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযানে রেলের ২৮৭ শতক জমির উপর বিভিন্ন স্থাপনা সম্পূর্ণ গুড়িয়ে রেলের এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়। এসময় ভানুগাছ সড়কের উত্তর-পূর্ব দিক এক প্রকার ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়।

এর আগে সকালে শহরের এই অংশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদকালে দ্রুত মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

জানা যায়, গত ৩৮ বছর ধরে অবৈধ দখলে ছিল রেলের শতকোটি টাকার ভূমি। এর আগে কয়েকদফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার করা যায়নি এক ছটাক ভূমিও। বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন শ্রীমঙ্গল স্টেশন এলাকার ভানুগাছ রোডের পূর্বপাশ সংলগ্ন রূপশপুর মৌজায় জেএল নং ৬৭, খতিয়ান নং-৩, এসএ দাগ-১৭৬১’এ ২৮৭ শতক ভূমি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণির দখলদার শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় ‘কৃষি নার্সারি প্রকল্প’র নামে ১৩৫ শতক ভূমি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এছাড়া শহরের শতাধিক প্রভাবশালী একই দাগের ১৫২ শতক ভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

সূত্র মতে, এই ১৫২ শতক ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এতে সরকার এ খাত থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।

একটি সূত্র জানায়, সরকারি রাজস্ব বাড়াতে ১৯৮১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব জমিতে ১৮২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সেসময় হানিফ ও অপরাপর দখলদারদের করা একটি স্বত্ব মামলার জটিলতায় রেল বিভাগ সেসব প্লটের দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি।

অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা রেলের আইন ও সংশ্লিষ্ট শাখার এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া ও জাল দলিল সৃষ্টি করে ভূমি দখলে নিতে একের পর এক স্বত্ব মামলা করে। এরই মধ্যে এসব মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ হয়। ফলে উচ্চ আদালতের রেলের পক্ষে রায় থাকা স্বত্বেও দখল ধরে রাখতে সামর্থ্য হয়েছিল প্রভাবশালীরা।

জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারি প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল বিভাগ এক অভিযান চালায়। এসময় দখলদাররা মুক্তিযোদ্ধা ব্যানার ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে নিয়ে সেই অভিযানে বাঁধা দেয়। বাঁধার মুখে পড়ে রেল বিভাগ অভিযান স্থগিত করে চলে যায়।

উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে রেলের এই ভূমি উদ্ধার করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও বাকি ভূমি লিজের আওতায় আনা হবে।

২০১৬ সালের ব্যর্থ উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে অতীতের অনেক ঘটনা আছে, আজকের এই উচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পারবো। আর শ্রীমঙ্গল ব্রিটিশ আমল থেকেই ঐতিহ্যবাহী একটি শহর, এই উন্নয়ন রেলের জায়গাকেই ঘিরে।

ব্রিটিশ আমল থেকে রেল লাইন থেকে ৫’শ ফুট পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা আছে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রভাবশালীরা রেলের অনেক ভূমি দখলে নিয়ে রাখে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মুগদা সড়কে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চলছে বঙ্গবাজারে  
হাতিয়ায় খালের ওপর নির্মিত ভবন ভেঙ্গে দিলো মেয়র
লোহাগড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
X
Fresh