• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান (ভিডিও)

জহির রায়হান সোহাগ, চুয়াডাঙ্গা

  ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:১১
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান

গাছের ডালের থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ-হলুদ মাল্টা। দেখে মনে হতে পারে এটি দেশের বাইরের কোনও মাল্টা বাগানের দৃশ্য। কিন্তু না, আসলে এটি দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান যা গড়ে তোলা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের মাঠে কৃষক শাখাওয়াত হোসেন বাবুল ৪০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল এই মাল্টা বাগান।

শুরুর গল্প
দামুড়হুদা উপজেলার ভগিরথপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহিমের বড় ছেলে শাখাওয়াত হোসেন বাবুল চাকরি করেন পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কৈশোর থেকেই গাছ লাগানোর নেশা শাখাওয়াতের। ২০১৩ সালে খুলনায় চাকরি করার সময় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বেড়াতে যান শাখাওয়াত। সেখানে টসটসে রসাল মাল্টার স্বাদে মুগ্ধ হন তিনি। ওই উদ্যান থেকে বারী-১ জাতের ২০টি মাল্টার চারা কেনেন তিনি। সেই চারা বদলে দিয়েছে তার জীবন, এনেছে সুখের বার্তা।

নিজ হাতে কলম তৈরি করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর মাঠে প্রথমে ২০ বিঘা পরে ৪০ বিঘা জমি বন্দোবস্ত নিয়ে গড়ে তুলেছেন চার হাজার মাল্টাগাছের বিশাল বাগান। যা দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ওই মাল্টা পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর বাগানের উৎপাদিত মাল্টা দেশের বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান কৃষক শাখাওয়াত। এদিকে, মাল্টা উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার চার উপজেলায় প্রায় ১০০ বিঘা বা ১৩ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে শাখাওয়াত হোসেন নিজেই চাষ করেছেন ৪০ বিঘা। কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য শাখাওয়াত হোসেন সেরা উদ্যান চাষি ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন।

শাখাওয়াত হোসেন জানান, বাতাসে থোকায় থোকায় দোল খাওয়া মাল্টাগুলো তার কাছে স্বপ্ন। বাগান তৈরি ও পরিচর্যার জনবল খরচ হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে মাল্টা ফল ও চারা বিক্রি করে অর্ধেকের বেশি টাকা উঠে গেছে।

তিনি জানান, গত বছর পাইকারি প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা (৮০ টাকা কেজি) ও মৌসুম ছাড়া প্রতি মণ ৭ হাজার ২০০ টাকা (১৮০ টাকা কেজি) দরে বিক্রি করা হয়েছিল। এ বছর অন্তত ৭০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

শাখাওয়াত হোসেন জানান, বাগানের পরিচর্যা ও মাল্টা বিপণনের জন্য পাঁচজন কর্মী কাজ করছেন। বাগান তৈরি ও পরিচর্যার জনবল খরচ হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে, মাল্টা ফল ও চারা বিক্রি করে পুরো খরচের টাকা উঠে গেছে প্রথম বছরেই। প্রতিবছর মাল্টা ফল ও চারা বিক্রি করে প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।

তিনি জানান, গত বছর বড় গাছগুলোতে পরিপূর্ণ ফল ছিল ৭০০ থেকে ৮০০টি। এ বছর তা আরও বেশি। ২০১৭ সালে প্রথমবার বাগানে ফল ধরে। ১০০ মণ মাল্টা বিক্রি করা হয়। গত বছর বিক্রি করা হয় আরও ১৫০ মণ। এ বছর যে পরিমাণ ফল এসেছে, তাতে ৮০০ মণ মাল্টা উৎপাদন হবে।
শাখাওয়াত আরও জানান, গত বছর পাইকারি প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা (৮০ টাকা কেজি) ও মৌসুম ছাড়া প্রতিমণ ৭ হাজার ২০০ টাকা (১৮০ টাকা কেজি) দরে বিক্রি করা হয়। বাগানে আসার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে মাল্টার বেচা বিক্রি বাড়বে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, মাল্টা উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও পাবনা, নওগাঁ, গাইবান্ধা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মাল্টা ফল কিনতে ও চারা সংগ্রহ করতে আসেন। এছাড়া ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন মাল্টা কিনতে।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই, সারা দেশে এই চাষ ছড়িয়ে যাক। তাহলে বিদেশ থেকে আর ফল আমদানি করা লাগবে না। এ বছর বাগানের উৎপাদিত মাল্টা দেশের বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান কৃষক শাখাওয়াত।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, দেশে বর্তমানে ফলের বিশাল বাজার রয়েছে। ফলমূল তুলনামূলকভাবে শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এবং রোগীরা খেয়ে থাকেন। কিন্তু যেসব ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, তা উৎপাদন ও সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

শাখাওয়াত হোসেন জৈব সার ও বালাইনাশক এবং ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে নিরাপদ উপায়ে মাল্টা উৎপাদন করছেন। সোলার পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে বাগানে পাইপলাইনে সেচ দিচ্ছেন। সরকারি কর্মচারী হয়েও কাজের ফাঁকে কৃষিতে মনোনিবেশ করে তিনি সারা দেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দেশের সবচেয়ে বড় এই মাল্টাবাগান দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে পর্যটনপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন। দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস, হোগলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল হক, সাংবাদিক বখতিয়ার হোসেন বকুল, আলম আশরাফসহ বাগান দেখতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মরাগাং বিলের কূলঘেষা মাল্টা বাগানে আসলে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন সবাই। অনেকেই মাল্টার কয়েকটি চারাও কিনে নিয়ে যান নিজে লাগানোর জন্য। কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় ওই চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে।

শাখাওয়াতের মাল্টা বাগানে যেভাবে যাবেন
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে সড়কপথে হেমায়েতপুর অথবা হোগলডাঙ্গা গ্রাম হয়ে শাখাওয়াতের মাল্টাবাগানে যেতে হয়। হোগলডাঙ্গা গ্রাম থেকে নৌকায় এবং হেমায়েতপুর থেকে গ্রামীণ রাস্তা ধরে বাগানে যাওয়া যায়। দেশের সবচেয়ে বড় এই মাল্টাবাগান দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে পর্যটনপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন। অনেকেই সপরিবারে আসেন এবং বাগানে ছবি তোলেন।

শাখাওয়াতের উদ্যোগ ও সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মাল্টা উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন অনেক শিক্ষিত তরুণ-যুবকেরা। সম্পৃক্ত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকেরাও। পরিকল্পিত মাল্টা চাষ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের কৃষি অর্থনীতি চাঙা হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh