• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দাউদকান্দিতে বিএনপি নেতার অত্যাচারে বাড়িছাড়া হিন্দু পরিবার

কুমিল্লা প্রতিনিধি

  ২৭ জুলাই ২০১৯, ২১:৫৮
হিন্দু, সম্পত্তি, বাড়িছাড়া, বিএনপি

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক হিন্দু পরিবারের বসতঘর ও রান্নাঘরসহ সকল স্থাপনা গায়েব করে দিয়েছে প্রতিবেশী এক স্থানীয় বিএনপি নেতা। উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বারইকান্দি গ্রামে বসবাসরত ওই হিন্দু পরিবারটি স্থানীয় বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান ভুইয়ার অত্যাচারে বাড়িছাড়া হতে বসেছে।

নিত্যানন্দ রায় ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে না থাকার সুযোগে তাদের বসতঘর, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, টিউবওয়েল, পায়খানা ও গাছগাছালিসহ বাড়ির সকল স্থাপনা মজিবুর রহমান ভুইয়ার নেতৃত্বে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

পরিবারের সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন, সকল স্থাপনা গায়েবের পর বাড়ির ভিটেমাটি কেটে সমান করে দেওয়া হয়েছে। যাতে দেখলে মনে হয় এখানে কখনোই কোনও ঘর-বাড়ি ছিল না। ঘটনাটি জানার পর বাড়ি গেলে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয় নিত্যানন্দ রায়ের পরিবারকে।

ওই পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় গেল ১০ জুলাই একটি মামলা (মামলা নং-১৬) করা হয়েছে।

---------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : কক্সবাজারে ডেঙ্গু জ্বরে জাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
---------------------------------------------------------------------

মামলার বাদী ভুক্তভোগী নিত্যানন্দ রায়ের ছেলে নির্মল রায়। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও ৯-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিত্যানন্দ রায় ও তার ছোট ছেলে নির্মল রায় চাকরির সুবাদে সোনারগাঁওয়ের বারদীতে থাকেন। বড় ছেলে রিপন রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থাকেন। নিত্যানন্দ রায়ের একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্ত্রী মারা যাওয়ায় বাড়িতে নিয়মিত থাকার কেউ নেই। তবে প্রায়ই নিত্যানন্দ রায় ও তার সন্তানরা বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নেতা মজিবুর দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যানন্দের বাড়ি-জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে কিছু জমি দখল করেও নিয়েছে।

নিত্যানন্দের কাকাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায়ের বাড়ির জমির কিছু অংশ দখল করে তাকে ইতোমধ্যে বাড়িছাড়া করেছে।নিজের জায়গা-জমি থাকার পরেও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি ভয়ে একই এলাকায় অন্যত্র ভাড়া থাকেন। এছাড়া নিত্যানন্দের জমিতে বসবাসকারী তার আপন ছোটভাই স্বপন রায়কেও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িছাড়া করেছে মজিবুর। এখন নিত্যানন্দকে বাড়ি ছাড়া করতে পারলেই মজিবুরের উদ্দেশ্যে সফল হয়।

মজিবুর নিত্যানন্দ রায় ও মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায়ের জমির কিছু অংশ দখল করে ইতোমধ্যে ধর্মীয় স্থাপনা ও দেয়াল নির্মাণ করেছে।

এসবের প্রতিকার চেয়ে ২০১৪ সালে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন নিত্যানন্দ রায়ের ছোট ছেলে নির্মল রায়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও মজিবুরের অপতৎপরতা বন্ধ না হওয়ায় ২০১৫ সালে দেওয়ানি আদালতে একটি মামলাও করেন নিত্যানন্দ রায়।

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, দেওয়ানি আদালতে মামলা চলাকালীন সময়েই চলতি বছরের ১০ জুন থেকে ২০ জুনের কোনও এক সময়ে নিত্যানন্দ রায়ের বসতঘর, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, টিউবওয়েল, পায়খানা ও গাছগাছালিসহ বাড়ির সকল স্থাপনা গায়েব করে দেওয়া হয়। ঘরের ভিটেমাটি কেটে সমান করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর ১০ জুলাই দুপুরে নিজের ভিটায় গেলে মজিবুরসহ তার অনুসারীরা নিত্যানন্দ রায়ের পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া দেয় এবং জমির দাবি নিয়ে এখানে কখনও এলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

থানায় মামলা করার পর ১২ জুলাই এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় নিজের ভিটায় কোনোমতে একটি ঘর নির্মাণ করে নিত্যানন্দ রায়ের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘর নির্মাণ করতে গেলেও মজিবুরের লোকজন বাধা ও হুমকি দেয়। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোনোমতে ঘরটি নির্মাণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে নির্মল রায় বলেন, মামলা দায়েরের পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১২ জুলাই আবার আমরা একটি ঘর নির্মাণ করি। কিন্তু মজিবুর রহমান পলাতক থেকে নানাভাবে আমাদেরকে মামলা তুলে নেওয়াসহ বাড়ি ছাড়তে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। আমি আমার বসতঘর, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, টিউবওয়েল, পায়খানা ও গাছগাছালিসহ বাড়ির সকল স্থাপনা গায়েবের বিচার চাই।

নির্মল আরও বলেন, আমাদের বাড়ি ও জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। সর্বশেষ ভূমি জরিপের বিএসআর রেকর্ডও আমাদের নামে হয়েছে। আমাদের এলাকা ছাড়া করতে মজিবুর রহমান আমাদের বাড়িটি দখলের অপচেষ্টা করছে। আমরা আমাদের বসতবাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকতে চাই।

মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায় বলেন, ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাকে বাড়িছাড়া করেছে মজিবুর। সে আমার মায়ের শ্মশানও দখল করে নিয়েছে। সেখানে ধর্মীয় স্থাপনা করেছে। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি। কোনো প্রতিকার পাইনি। মজিবুর এলাকায় প্রভাবশালী বলে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না। আমার বাড়িতে জমি থাকার পরেও একই এলাকায় অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, রণজিৎ রায় ৭৩ সালের দিকে আমার কাছে তার জমি বিক্রি করেন। আর নিত্যানন্দ রায় মোজাম্মেল নামের একজনের কাছে তাদের জমি বিক্রি করেন। আমি মোজাম্মেলের কাছ থেকে সেই জমি ক্রয় করি। এখানে দখল করার কোনও বিষয় নেই।

এ বিষয়ে জানতে দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

আরও পড়ুন

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টিপু-প্রীতি হত্যা: অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের
প্রাইভেটকারে আগুন লেগে কৃষক লীগ নেতাসহ নিহত ২
যে কারণে ৬৪ নেতাকে বিএনপির শোকজ
X
Fresh