ভবন নেই, গাছতলায় চলছে পড়াশোনা
এ বছরের এপ্রিল মাসে ধোপাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এই বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। বিদ্যালয়টি নড়াইলের লোহাগড়ার চোরখালী গ্রামে অবস্থিত। এ বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন যা ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৩২ সালে ২৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন এলাকাবাসী। ১৯৯৬ সালে সরকারি বরাদ্দে বিদ্যালয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন তৈরি হয়। এ ভবনেই পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম চলে আসছিল। বর্তমানে চোরখালী ও গোফাডাঙ্গা গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এ স্কুলে শিক্ষার্থী ১৪১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৬৭ জন ও ছাত্র ৭৪ জন।
শিক্ষকরা জানান, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা। ওই সভায় এ বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ওই ভবনে ক্লাস নিতে নিষেধ করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। সেই থেকে ভবনের বাইরের গাছতলায় পাঠদান চলছে।
প্রায় তিন বছর আগে গ্রামবাসীর উদ্যোগে করা হয়েছিল একটি টিনশেড ছোট ঘর। সেখানে হয় পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি কক্ষ একটু ভালো মনে হয়। সেখানে হয় প্রাক-প্রাথমিক (শিশু) শ্রেণির ক্লাস। বাকি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হয় গাছতলায়। ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই এখনও চলে অফিসের কার্যক্রম।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় চত্বরে বড় একটি রেইনট্রি গাছ। সে গাছের নিচে হচ্ছে ক্লাস। একই জায়গায় গাদাগাদি করে ওই চারটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসেছে। নিচে নরম মাটি। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। মাঝেমধ্যে গাছের পাতা ও ছোট ডাল ভেঙে পড়ছে শিক্ষার্থীদের গায়ে। তাদের শরীরে লাগছে রোদ। বিদ্যালয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার দুটি ব্যবহারের অযোগ্য। আর ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদে ও বিমে ফাটল ধরেছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। বারান্দার খুঁটিগুলোর ইট-খোয়া খসে পড়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
কথা হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক তন্দ্রাদেবী রায় ও নার্গিস পারভীনের সঙ্গে। তারা জানান, বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়। কালো মেঘ দেখলেই ঝড়ের ভয়ে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। সকালে বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে না। এ অবস্থায় কোমলমতি শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত, জান্নাতি, ফারজানা, তানজিলা, রহিমা, লায়লা এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসি নন্দী, আমেনা, খুশি নন্দী, প্রিয়ম আচার্য, অর্ঘ দত্ত ও নয়ন কীর্তনিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছরীন আক্তার জানান, অনেক চেষ্টা তদবির করছি ভবনের জন্য। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আকবর হোসেন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
জেবি/পি
মন্তব্য করুন