• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে রিফাতকে হত্যার নির্দেশনা দেয়া হয়

মনির হোসেন কামাল, বরগুনা

  ২৮ জুন ২০১৯, ১৮:৫৩
রিফাত হত্যার দৃশ্য
রিফাত হত্যার দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার রিফাত হত্যার মিশন পরিচালনা করেছে ০০৭ নামের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ডের ০০৭ নামের সাথে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে গ্রুপটি পরিচালনা করে। এদের ফেসবুকভিত্তিক একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনার নির্দেশনা দেয়া হয়।

ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা সংবলিত কয়েকটি স্ক্রিনশট এ প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। এতে দেখা যায়, ঘাতক রিফাত ফরাজী আগের দিন রাত আটটার দিকে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেয়। এসময় নামের প্রথমে Mohammad ও সাগর নামের একজন কোথায় থাকবে জানতে চায়। রিফাত তাদেরকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল নয়টায় থাকতে বলে। রিফাত গ্রুপে দায়ের ছবি দিয়ে বলে, পারলে এইটা নিয়া থাইকো। তখন Mohammad রিপ্লাইয়ে দা নিয়ে থাকবো বলে জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নয়নের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ০০৭ নামে একটি গ্যাং গ্রুপ কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘিরপাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। গ্রুপটির সদস্যরা ০০৭ কে সংকেত ব্যবহার করতো। ঘাতক নয়নের মোটরসাইকেল ও বাড়ির দেয়ালে ০০৭ বন্ড লেখা থাকতো। এই গ্রুপ কেজি স্কুল, ক্রোক ও ধানসিঁড়ি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। বিশেষ করে পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রদের ম্যাচে এরা নিয়মিত হানা দিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে টাকা পয়সা আদায়, ছিনতাই, ধানসিঁড়ি এলাকায় একসাথে ঘুরতে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের অপদস্ত করে টাকা আদায়সহ বেশ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে রাকিব নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে যখম, পরের বছর ক্রোক এলাকার ফারুক প্যাদার ছেলে জীবনকে কুপিয়ে জখমসহ বেশ কিছু ঘটনার সাথে এই ০০৭ গ্যাং এর সম্পৃক্ততা ছিল। এসব কাজে নয়ন সরাসরি অংশ না নিলেও তার নির্দেশনায় রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে গ্রুপটির সদস্যরা এসব কর্মকাণ্ড সংগঠিত করত। গ্রুপের লিডার নয়ন বন্ড মূলত মাদক ব্যবসায় জড়িত। এছাড়াও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথেও গ্রুপটির সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাদক ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পরে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার ফের অপরাধে জড়িয়ে পরে নয়ন। তার বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।

ক্রোক এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, গতবছর শেষের দিকে দীঘিরপাড়ের একটি ম্যাচে হানা দিয়ে মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে এ বাহিনী। পরবর্তীতে ভয়ে ১৫ জন ছাত্র ম্যাচ ত্যাগ করে চলে যায়।

কেজি স্কুল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, চুরি, ছিনতাই, লুটপাট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা এই ০০৭ বাহিনী করেনি।

ক্রোক স্লুইজ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতবছর জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষ এই গ্রুপকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় আনে। নয়নসহ অন্যরা আমার উপর হামলা করে। আমি এর বিচার পাইনি।

ওই এলাকার কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম নান্না বলেন, ছাত্রদের ম্যাচ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনার বিচারের জন্য ডাকায় তার বাবা দুলাল ফরাজীর সামনেই আমার উপর হামলার চেষ্টা করে। আমি তখনকার পুলিশ সুপারসহ সব রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিছুই হয়নি।

নাম প্রকাশ না করে বরগুনা পলিটকেনিকের কয়েকজন ছাত্র জানান, ০০৭ বন্ড বাহীনির দাপটে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আমরা আসামিদের ধরতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। পুলিশের সব কটি উইংসহ র‌্যাব এমনকি স্পেশাল গোয়েন্দা সংস্থাও এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা সফল হবো।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছি। এটি শুধু বরগুনা নয়, সারাদেশের পুলিশকে অপরাধীদের ব্যাপারে তথ্য দেয়া হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করি শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি দল। পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বরিশাল থেকে ১০ জনের স্পেশাল টিম ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। মিজানুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শুরু করেছি।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ঘটনার দুই দিনেরও বেশি পার হলেও মূল আসামিরা ধরা পড়েনি। তবুও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গুরুত্ব দিয়ে আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় তৎপরতাসহ গণমাধ্যমের সহায়তায় আমি সন্তষ্ট। আমি আশা করি শিগগিরই মূল আসামিরা ধরা পরবে এবং আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার পাব।

বরগুনার নবাগত জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ শুক্রবার সকালে বড় লবণগোলায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফের বাড়ি পরিদর্শন করে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন ও সান্ত্বনা দেন। এসময় দোয়া অনুষ্ঠান করার জন্য তিনি রিফাতের বাবার হাতে ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন।

পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ নির্দেশনা
তীব্র গরমে পুলিশ সদস্যদের প্রতি ১১ নির্দেশনা
নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা
X
Fresh