রাজহাঁস বিক্রির টাকায় আর ঈদের পোশাক কিনতে হলো না মাসুদকে
সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় ঈদের পোশাকের জন্য রাজহাঁস বিক্রি করতে আসা এক শিশুর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় স্কুলের ইউনিফর্ম পরে হাটে রাজহাঁস বিক্রি করছে এক শিশু।
অনেকের টাইমলাইনে ছবিটি শেয়ার করতে দেখা গেছে। স্কুলের পোশাক পরে কেন হাঁস বিক্রি করছে শিশুটি সে বিষয়ে কৌতূহলী হন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছবির সেই শিশুর নাম মাসুদ। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সন্ধ্যাহালা গ্রামের দরিদ্র কৃষক আলফত আলীর ছেলে সে।
মাসুদের হাঁস বিক্রি করতে যাওয়ার বিষয়ে তার দাদা মঙ্গল আলী গণমাধ্যমকে জানান, ‘এবার ঈদে মাসুদের বায়না নতুন পোশাক কিনে দিতে হবে। কিন্তু ছেলের সেই ন্যায্য বায়না পূরণের সামর্থ্য নেই অভাবী বাবার। স্কুলের ড্রেস ছাড়া পরনের মতো আর কোনও ভালো জামা-কাপড় নেই মাসুদের। স্কুলড্রেস পরেই সারাদিন পার করতে হয় তাকে। তাই কোনও উপায় না পেয়ে উপজেলার গাংধরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাঁচকাঠা বাজারে নিজের পোষ্য একমাত্র রাজহাঁসটি নিয়ে হাজির হয় সে। হাঁস বিক্রির টাকা দিয়ে ঈদের নতুন জামা-প্যান্ট কিনবে মাসুদ।
জানা গেছে, পাঁচশত টাকায় হাঁসটি বিক্রি করে মাসুদ। তবে সে টাকায় তাকে আর জামা-কাপড় কিনতে হয়নি।
কারণ ফেসবুকসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে মাসুদের এই হাঁস বিক্রির খবরটি এলে বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগাযোগ করা হয় তার পরিবারের সঙ্গে। অনেকেই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
মাসুদের বড় বোন মারুফা জানান, গেল সোমবার ৫০০ টাকায় হাঁস বিক্রি করেছে মাসুদ। তবে বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন বাড়িতে এসে মাসুদের খোঁজখবর নিয়ে যায়। অনেকে বিকাশে টাকাও পাঠাতে চেয়েছেন। অনেকে মোবাইলে মাসুদের কথা জিজ্ঞেস করে সাহায্য করতে চেয়েছেন।
মাসুদের জন্য কয়েকজন নতুন জামাও নিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি যোগ করেন, শুধু তাই নয় মাসুদের মা ও ভাইয়ের জন্যও নতুন জামা-কাপড় পাঠিয়েছেন কলমাকান্দা থানা পুলিশের ওসি।’
এ বিষয়ে মাসুদের চাচা হোসেন মিয়া জানান, ‘গতকাল সন্ধ্যায় দুজন এসআই বাড়িতে এসেছিলেন। তারা মাসুদের ছোট ভাইয়ের জন্য জামা ও তার মায়ের জন্য শাড়ি নিয়ে আসেন। কলমাকান্দা থানা পুলিশের ওসি এসব উপহার পাঠিয়েছেন বলে জানায় তারা।
চলে যাওয়ার সময় মাসুদের হাতেও কিছু টাকা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে কলমাকান্দা থানার পুলিশ ওই শিশুটিকে ডেকে এনে ঈদ উপহার সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় কলমাকান্দা থানার ওসি মাজহারুল করিম বলেন, নেত্রকোনা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী স্যারের নির্দেশনায় শিশুটিকে থানায় ডেকে এনে এ উপহার সামগ্রী দেয়া হয়েছে।
মাসুদের মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদ উপহার পেয়ে আমার ছেলের আনন্দ দেখে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমিও ভীষণ আনন্দিত। তাছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন আমার ছেলেকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মাসুদের বিষয়টি নজরে এসেছে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলামেরও। বুধবার বিকালে তার নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুয়েল সি সাংমা মাসুদ ও তার পরিবারকে উপজেলা ভূমি অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
সেখানে মাসুদকে এক সেট জামা-প্যান্ট, এক জোড়া জুতা, গেঞ্জি এবং তার মাকে একটি শাড়ি, নগদ দেড় হাজার টাকা প্রদান করেন ডিসি মঈনুল ইসলাম।
গাংধরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদের এবারের ঈদ আনন্দময় ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জেবি
মন্তব্য করুন