কবি কাজী নজরুলের স্মৃতি রক্ষায় তেওতা গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কবিপত্নী আশালতা সেন দোলনদেবী ওরফে প্রমিলা দেবীর স্মৃতি রক্ষার্থে কবিপত্নীর জন্মভূমি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নজরুল-প্রমীলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার কবির ১২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় এসব দাবি তোলেন তারা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস এবং প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন নজরুল ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ফৌজিয়া খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির হোসেন, নজরুল প্রমিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোন্নাফ খান, নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালেহা ইসলাম, শিবালয় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বাবুর আক্তার মঞ্জুর, তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, নজরুল প্রমিলা গবেষণা পরিষদের সভাপতি আতিকুর রহমান, তেওতা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক, সহকারী শিক্ষক অজয় কুমার চক্রবর্তী, নজরুল-প্রমীলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান, মানিকগঞ্জ নজরুল-প্রমিলা পরিষদের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বাবর এবং নজরুল প্রমিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক টিমুনী খান রীনো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তার বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুলের শ্বশুরবাড়ি মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রামে। পিতা বসন্ত কুমার সেনের মৃত্যুর পর কবিপত্নী প্রমিলা দেবী তার মা গিরিবালা দেবী’র সঙ্গে কুমিল্লায় ছোট চাচা ইন্দ্রকুমার সেনের বাসায় চলে যান এবং পরবর্তীতে সেখানেই বসবাস করেন। কিন্তু ভুলবশত বিভিন্ন কাগজপত্রে কবিপত্নী প্রমিলা দেবীর বাড়ি কুমিল্লা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নজরুল-প্রমিলা গবেষণা পরিষদের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, কবির শ্বশুরবাড়ি অবহেলা ও অযত্নে পড়ে আছে। তাদের স্মৃতির রক্ষায় বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
তেওতা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর স্মৃতিরক্ষায় এবং শিক্ষাপ্রসারে তেওতা গ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান।
নজরুল-প্রমীলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিয়ের আগে ও পরে কাজী নজরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার তেওতায় এসেছেন। তেওতা জমিদার বাড়িতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তবে এখানে তাদের জন্য কোনও শৌচাগার নেই, খাবারের জন্য কোনও রেস্তোরাও নেই। এসময় দর্শনার্থীদের থাকার জন্য এখানে একটি ডাকবাংলো নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান কবি সালেহা ইসলাম বলেন, আরিচা বন্দর থেকে তেওতায় যাতায়াতের রাস্তাটি যমুনার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই রাস্তাটি রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন বলেন, কাজী নজরুল ছিলেন সাম্যের কবি, দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি বা মানবতার কবিই ছিলেন না, তিনি সময়ের কবিও ছিলেন। যুগ যুগ ধরে তার সৃষ্টিকর্ম অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা সৃষ্টি করবে।
কবির কর্ম ও জীবনী নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন প্রধান আলোচক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। তিনি বলেন, সাহিত্যের প্রতিটি শাখায়ই কাজী নজরুল ইসলাম পাণ্ডিত্য ছিল। তার অসংখ্য কবিতা, গান, গজল ও প্রবন্ধ এখন মানুষকে উজ্জীবিত করে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি জানান, তেওতা জমিদার বাড়ি ও জায়গা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন। কাজেই এখানে কোনও প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত। নিশ্চয়ই তারা চেষ্টা করছেন।
এসএস
মন্তব্য করুন