• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নওগাঁয় ফণীর আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ধান

নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০৪ মে ২০১৯, ২১:৫৮
এভাবেই নওগাঁয় ফণীর আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ধান, ছবি: আরটিভি অনলাইন

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় নওগাঁয় বোরো ধান ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুইদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ার কারণে অধিকাংশ ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ায় শিষগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

সরেজমিনে ঘুরে ও জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নওগাঁ জেলায় গত শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। শনিবার কখনও মুষলধারে আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হালকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এতে অধিকাংশ বোরো ধানের ক্ষেতে পানি জমে গেছে এবং ঝড়ের কারণে বেশিরভাগ ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি না সরালে কিংবা পাকা ধান কাটতে না পারলে এসব ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে নওগাঁয় এক লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ও জগৎসিংহপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেতের ধানগাছ পড়ে গেছে। কোনও কোনও ক্ষেতে পাকা ধানের শিষগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক তাদের ফসল বাঁচাতে জমির আইল কেটে পানি বের করার চেষ্টা করছেন।

জেলার মান্দা উপজেলার গণেশপুর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, দুইদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় তাদের মাঠের অধিকাংশ বোরো ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ক্ষেতে জমে গেছে পানি। সাধারণত ধানগাছ পড়ে গেলে ধানের রং নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারের ব্যবসায়ীরা ধানগুলো কিনতে চান না। কিনলেও দাম কম দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, মাটিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতে শ্রমিক খরচও বেশি পড়ে। ধান সোজা থাকলে এক বিঘা জমির ধান কাটতে দিনে পাঁচজন শ্রমিক লাগে। সেই জায়গায় নুয়ে পড়া ধান কাটতে সাতজন শ্রমিকের প্রয়োজন।

জগৎসিংহপুর গ্রামের কৃষক হাফিজার রহমান বলেন, ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। সব ক্ষেতের ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারিনি। এখন বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে সব ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পাকা ধানের শিষগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু জমিগুলোর আইল কেটে দেওয়ার পরেও পানি বের হচ্ছে না। এভাবে দুই-তিন দিন জমিতে পানি জমে থাকলে ধান পচে যাবে। আবার পানি বের করা গেলেও এই নুয়ে পড়া ধান কাটতে এখন খরচ বেশি পড়বে।

টানা বৃষ্টির কারণে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মান্দা উপজেলার কৃষকেরা। এই উপজেলার বেশ কিছু বিলাঞ্চল রয়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব বিলের অধিকাংশ ধান তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা ধারণা করছেন বৃষ্টি কমে গেলেও এসব বিলের পানি খুব তাড়াতাড়ি নামবে না। কারণ, অন্যান্য মাঠের উঁচু জমির পানি কেটে দেওয়ায় বিলে গিয়ে ওই সব পানি জমবে।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মান্দার বিল এলাকার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধানগুলো কিছুটা নষ্ট হতে পারে। এছাড়া উঁচু জমিগুলোতে পানি জমলেও বৃষ্টি থামলেই দ্রুত ওইসব ক্ষেতের পানি নেমে যাবে। ফলে ওইসব মাঠে খুব বেশি ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও নিরূপণ করা যায়নি। তবে রোববার থেকে টানা রোদ হলে বোরো ধান কিংবা অন্যান্য ফসলের তেমন কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এ ধরনের বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার কারণে কিছু কিছু বোরো ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং ক্ষেতে পানি জমে গেছে। তবে এখনও আমরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছি না। কারণ এই এলাকার অধিকাংশ মাঠের জমিই উঁচু। বৃষ্টি থেমে গেলেই কৃষকেরা ক্ষেতের আইল কেটে পানি বের করে দেবে এবং দ্রুত ধান কেটে ফেলার চেষ্টা করবে। তবে এ অবস্থায় কৃষি শ্রমিকের খরচ বেশি পড়তে পারে।

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজধানীতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীর আত্মহত্যা
রাঙ্গামাটিতে অর্ধদিবস অবরোধ ডাকল ইউপিডিএফ
বৃষ্টি প্রার্থনায় রাজধানীতে ইসতিসকার নামাজ আদায়
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
X
Fresh