• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাড়িতে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা!

শাহীর শাহ, টেকনাফ

  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১৪

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ডিগ্রি কলেজের পাশেই সরু গলি। গলি দিয়ে সামনে গেলেই মোড়। মোড়ের ঠিক ডান পাশে একটি আলিশান বাড়ি। বাইরের লাল গেটটি ভেতর থেকে আটকানো। গেটে নক করতেই পাশে এসে দাঁড়ালেন তিন যুবক। তারা যেন ওই সরু গলিতে প্রস্তুতই ছিলেন। ভেতর থেকে এক যুবক গেটটি খুলে পরিচয় জানতে চাইলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সরওয়ার আলমের (৩২) খোঁজ জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন, বাসায় কেউ নেই।

তবে বাসাটি দেখে তা মনে হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে অর্ধ বয়স্ক এক মহিলা এসে বলেন, সরওয়ার বাসায় নেই, যা বলার আমাকে বলেন। এরই মধ্যে সাদা লুঙ্গি পরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে সরওয়ার আসলেন। সাংবাদিক জানার পর বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। সঙ্গে ওই ৪ যুবকও ঢুকলেন।

কী করেন আপনি- জানতে চাইলে সরওয়ার বলেন, টাইলসের দোকান আছে। পাশাপাশি একটি মরিচের মিল আছে। তবে এলাকার সবাই জানিয়েছে আপনি বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। উত্তরে সরওয়ার বলেন, কেউ হয়তো আমার বাড়ি ও ব্যবসা দেখে শত্রুতা করতে পারে। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।

তার বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সরওয়ার আলম। তার বাবা একসময় বাসের হেল্পার ছিলেন। সরওয়ারও এক ব্যবসায়ীর অধীনে চাকরি করে কষ্টে দিন কাটাতেন। কিন্তু ৩-৪ বছর আগে ইয়াবা ব্যবসায় নাম লিখিয়ে তার অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। অন্য ব্যবসা চালুর পাশাপাশি গড়েছেন আলিশান বাড়িও।

অভিযোগ ওঠে ক্রসফায়ার-আত্মসমর্পণ এসবের মধ্যেও বহাল তবিয়তে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সরওয়ার আলম।

শহর ছাড়িয়ে এবার একটু দূরে যাওয়া যাক। হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা হামিদ হোসেন। তার বাবার নাম মৃত শিকদার আলী। তালিকাভুক্ত এই ইয়াবা ব্যবসায়ীরও রয়েছে আলিশান বাড়ি। তবে বাড়িটি এখন বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। পুলিশের আটকের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকেন তিনি।

প্রতিবেশীরা বলেছেন, গা-ঢাকা দেয়ার নাম করে সারাদিন পাশের পাহাড়ে সময় কাটান হামিদ। রাত হলেই ফেরেন আলিশান বাড়িতে। রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন এই বাড়ি থেকেই। সেই সঙ্গে তার একটি বাহিনী রয়েছে। এ বাহিনী দিয়ে পরিচালনা করা হয় তার রামরাজত্ব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সরওয়ার আলম কিংবা আবদুল হামিদই নন, টেকনাফের প্রায় অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দেয়ার নাম করে চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসা। অজ্ঞাত কারণে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে না। এমনকি বর্তমানে যারা ইয়াবা ব্যবসা করছেন তাদের প্রাসাদও রয়েছে অক্ষত। তবে পুলিশ বলছে, টেকনাফের শত শত ইয়াবা ব্যবসায়ীর উপর নজরদারি করা সম্ভব নয়। আর প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না। ইয়াবার তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের ব্যাপারে অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জামাল মেম্বার ও তার ছেলে শাহ আজম আত্মসমর্পণ করলেও অপর ছেলে শাহ নেওয়াজ ও তার স্ত্রী বাড়িতে থেকেই আগের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসা। টেকনাফ সদরের আবদুল কাদের উত্তর লম্বরীর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে এখনো ইয়াবা ব্যবসা চলমান রেখেছেন। তার রয়েছে আলিশান বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম হোতা নুরুল হক ভুট্টো গা-ঢাকা দিলেও তার নির্দেশে চলছে আলাদা সিন্ডিকেট। ইয়াবার শুরু দিকের গডফাদার মৃত আবুল বাশারের ছেলে রমজান আলী চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে দীর্ঘদিন ধরে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও ইয়াবার সিন্ডিকেট বজায় রেখেছেন। টেকনাফের কে কে পাড়ায় তার রয়েছে ৫ তলা আলিশান বাড়ি। সেখানে থাকা স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন নিয়মিত টেকনাফের বাড়িতে যাতায়াত করে ইয়াবার সিন্ডিকেট বজায় রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের অনেক স্বজন এখনো ইয়াবা ব্যবসা সচল রেখেছেন বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, টেকনাফে শত শত ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের আলাদাভাবে নজরদারি করা সম্ভব নয়। যাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাই তাদের বিরুদ্ধেই তদন্ত শুরু করি। ইয়াবা দমনে ইতোমধ্যে পুলিশ অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। পুরোপুরি সফল হতে আরও একটু সময় লাগবে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

আরও পড়ুন

এমসি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আখাউড়ায় ১৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক 
শ্রীপুরে পিস্তল ও ইয়াবাসহ যুবক গ্রেপ্তার 
গাঁজাগাছ-ইয়াবাসহ আটক ২
পাথরঘাটায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
X
Fresh