কব্জি ও পা ছাড়াই এগিয়ে চলছে সাকিব
জন্ম থেকেই সাকিবের দুই হাতের কব্জি ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ নেই। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি।
কব্জি ছাড়াই দুই হাতে কলম ধরে লিখে সে এগিয়ে যাচ্ছে। এবার সে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মন্মথপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
নাজমুস সাকিব (১৬) উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরদারপাড়া গ্রামের প্রান্তিক চাষি আজিম উদ্দীন ও হোসনে আরার ছেলে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে সাকিব সবার ছোট। তার অন্য দুই ভাইও পড়ালেখা করছে। বড় ভাই রোকনুজ্জামান হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মেজো ভাই আখেরুজ্জামান দিনাজপুর সরকারি পলিটেকনিক্যাল কলেজে মেকানিক্যাল বিষয়ে ডিপ্লোমার শেষ বর্ষের ছাত্র। এর আগে সে এভাবেই দুই হাতে কলম ধরে লিখে জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৪০ পয়েন্ট পেশে পাস করেছে।
সাকিব যশাই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায় অদম্য এই কিশোর কব্জিবিহীন দুই হাতের মাঝখানে কলম চেপে ধরে প্রশ্নের উত্তর লিখে চলছে। পরনে চেক শার্ট। তার ওপর একটি কটি। বাম হাতে কালো রঙের বেল্টের ঘড়ি। ডান-বাম না তাকিয়ে সে লিখেই চলছে।
সাকিব যে কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই কক্ষের পরিদর্শক জানান, সাকিব ভালোভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। কারও সাহায্য নেয়নি। নিজের মনের মতো লিখছে। এভাবেই দ্রুত লিখতে পারছে। লেখাও বেশ স্পষ্ট।
পরীক্ষা শেষে নাজমুস সাকিবের সঙ্গে কথা হয় আরটিভি অনলাইনের। তিনি জানান, এসএসসি পরীক্ষা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দিলেও সামনে মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। ভবিষ্যতে সাংবাদিক হতে চান তিনি।
সাকিবের বাবা আজিম উদ্দীন বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমার এ ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পাঁচ বছর বয়সে সে হাঁটা শেখে। এরপর তাকে দেয়া হয় ব্র্যাক স্কুলে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মন্মথপুর কো-অপারেটিভ হাইস্কুলে ভর্তি করি। পরবর্তীতে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাম-টু-ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এর আর্থিক সহায়তায় সাকিব লেখাপড়া করছে।
মন্মমথপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, নাজমুস সাকিব তার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়ালেখা করছে। জেএসসিতে সে ভালো ফল করেছে। এসএসসিতেও সে ভালো করবে বলে তিনি আশা করেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাম-টু-ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এর নির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান জানান, নাজমুস সাকিবসহ আমরা মোট ৮০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি। দাতাসংস্থা পি.আর.আই.ডি.ই (প্রাইড) এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। এর মধ্যে চলতি বছর পাঁচজন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
কাম-টু-ওয়ার্ক এর ফিজিও থেরাপি শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, ২০১৪ সালে সিক্সে পড়ার সময় সাকিবকে কাম-টু-ওয়ার্ক একটি কৃত্রিম পা দিয়েছিল। কিন্তু সেটি এখন আর পায়ে সেট হচ্ছে না। এ কারণে চলাফেরা করতে তার কষ্ট হচ্ছে।
জেবি
মন্তব্য করুন