অভাবে পড়ে সন্তান বিক্রি করলেন দৃষ্টিহীন বাবা

অভাবের কারণে একদিনের ছেলে সন্তানকে মাত্র এক বস্তা চাল ও চার হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবা মোমেন মিয়া।

অসহায় বাবা মোমেন মিয়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের সাহিদ মিয়ার ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহায় সম্বল বলতে মোমেন মিয়ার আছে শুধু একটি ঝুপড়ি ঘর। মোমেন মিয়ার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। দারিদ্র্যের কাছে হেরে সংসারের ভার নিতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন মোমেন মিয়া। তবে ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় আর সংসার চলছিল না। গত কয়েক মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ঋণের বোঝা মাথায় পড়ে মোমেন মিয়ার। এসবের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় একটি হাসপাতালে মোমেন মিয়ার স্ত্রী ষষ্ঠবারের মতো একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। এ সন্তানের ভরণপোষণের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। কোন উপায় না পেয়ে একদিন বয়সী নবজাতককে তুলে দেন স্থানীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে। বিনিময়ে নেন চার হাজার টাকা ও এক বস্তা চাল।

বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় মোমেন মিয়ার সঙ্গে। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে সাতজনের বসবাস। আসলে আমরা সমাজে খুবই অবহেলিত। একদিন ভিক্ষা না করলে চুলায় আগুন জ্বলে না। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ভিক্ষা করে পাঁচ সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া কষ্টসাধ্য। একবেলা খেলে অন্য বেলায় না খেয়ে থাকি। আমি অচল মানুষ কিছু করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, এসবের মধ্যে ঘরে আসে ষষ্ঠ সন্তান। যেখানে আগের সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারি না সেখানে নতুন সন্তানের কি হবে ভেবে বুকে পাথর চাপা দিয়ে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। অন্তত সেখানে এই সন্তান বাঁচতে পারবে, একটু ভালো থাকতে পারবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মী ফখরুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, একটি পরিবারের বাবা-মা যখন তার সন্তানকে দারিদ্র্যের কারণে অন্যের হাতে তুলে দেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না আসলে পরিবারটি কতটা অসহায়। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। মোমেন মিয়ার পরিবারের সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা দরকার।

এমসি/ এমকে