• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নৌকা বানানো যার নেশা

আবুল কালাম আজাদ, পাবনা

  ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৩১

জীবনভর রং-বে-রঙের নৌকা বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা প্রকাশের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন ঈশ্বরদীর নৌকা মান্নান।

আব্দুল মান্নান (৬৯) ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের মৃত মহব্বত আলী চৌধুরীর ছেলে। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঘরে নববধূকে ফেলে তিনি যুদ্ধে চলে যান। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশ গ্রহণের সময় কোম্পানি কমান্ডার কাজী সদরুল হক সুধা, কমান্ডার জন, গ্রুপ লিডার জিয়াউল এর সঙ্গে থেকে তিনি যুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দিয়ে কখনো রিকশা চালক হয়ে, কখনো দিন মজুরি করে, সাইকেল-রিকশা মেরামতের কাজ করে সংসার চালিয়েছেন।

আব্দুল মান্নান জানান, প্রায় ২০ বছর আগে শখ করে টুকরো টিন দিয়ে তার প্রিয় প্রতীক একটি নৌকা বানানোর পরে নৌকা বানানোর নেশায় পরেন তিনি। এরপর থেকে তিনি ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে নিজের ছোট দোকানে সাজিয়ে রাখতেন। আওয়ামী লীগের কোনও জনসভা হলে কিংবা কোনও নেতাকে উপহার দেয়ার জন্য স্থানীয় নেতারা তার কাছ থেকে এসব নৌকা কিনতো। প্রথম দিকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও পরে এই ‘শো পিস’ নৌকা এখন তাকে এলাকায় ‘নৌকা মান্নান’ হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে। তার হাতে তৈরি প্রচুর নৌকা দেশের অনেক মন্ত্রী ও নেতাদের ঘরে শোভা পাচ্ছে।

কিন্তু এই নৌকা বানিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোভাবে জীবন যাপন করছেন একাত্তরের অদম্য সাহসী যোদ্ধা আব্দুল মান্নান। আব্দুল মান্নান বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ার বেদনা নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। এলাকার সবাই তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানলেও আব্দুল মান্নান এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।

তিনি জানান, যখন কোনও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে তার সামনে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেতে কিংবা ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে দেখেন তখন তার ভীষণ কষ্ট হয়। তিনি বলেন, যখন কোন রাজাকারকে দেখি স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছেন বীরদর্পে তখন চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি না।

তিনি বলেন, অস্ত্র জমা দেয়ার কাগজপত্র নিয়ে তিনবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে আবেদন করা হলেও এখনো তার ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি জোটেনি। আব্দুল মান্নান বলেন, তার নিজ গ্রাম এই সাঁড়াগোপালপুরেই ২/৩ জন আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন যথাযথভাবে দাখিল হয়েছে (নং-ডিজিআই ১০১২৮৭)’ বলে একটি কাগজ এসেছে কিন্তু এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম ওঠেনি। ইতোপূর্বে সারাদেশে এ ধরনের ১৭২ জনের নামের তালিকা করা হলেও সে তালিকা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার কামরুজ্জামান জানান, আব্দুল মান্নান তাদের সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তিনি আব্দুল মান্নানের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এখনো অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।

মুক্তিযুদ্ধে জয়ী ও জীবন যুদ্ধে অনেকটাই পরাজিত আব্দুল মান্নান বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ছাড়া আর কিছু চাওয়ারও নেই তার।

আরও পড়ুন :

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাবনায় ১২ ট্রাক ভারতীয় চিনি আটক
পাবনায় অপারেশনের সময় ২ প্রসূতির মৃত্যু
পাবনায় এক ট্রাক ড্রাইভারকে পিটিয়ে হত্যা
সর্বহারা নেতা রাজ্জাক হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৫
X
Fresh