মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের সময় পুলিশের আঘাতে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে পোশাক শ্রমিকরা। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করছেন। তবে পুলিশ বলছে, আতঙ্কে পদদলিত হয়ে অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ভোলাইল এলাকায় অবস্থিত এন আর গ্রুপের শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেয়।
এসময় শ্রমিকরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
একপর্যায়ে শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। এসময় ২০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত সাধারণ শ্রমিক আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের কারণে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। দুপুর একটায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলেনুর বেগম গুলি নামে এন আর গ্রুপে কর্মরত এক নারী শ্রমিক পুলিশের আঘাতে আহত হন। পরে সহযোগী শ্রমিকরা তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে তাকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর তিনশ শয্যা হাসপাতালের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শ্রমিকদের দাবি, পুলিশের নিক্ষিপ্ত টিয়ার সেল, গ্যাস ও লাঠির আঘাতে গুলি বেগম মারা গেছে। তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।
তবে শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, উত্তেজিত শ্রমিকদের শান্ত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল। কিন্তু শ্রমিকরা এন আর গার্মেন্টেসের ভেতরে ঢুকে স্টাফ রুম, কাম্পিউটারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর শুরু করে এবং গেইট লাগিয়ে পুলিশ ঢুকতে বাধা দেয়। তারা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় অনেক শ্রমিক দৌড়ে বের হতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়।
তিনি জানান, জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে মানুষ যেমন পদদলিত হয়, ঠিক একইভাবে এখানে অনেক মানুষকে পড়ে যেতে দেখা গেছে।
মারা যাওয়া নারীর বিষয়ে খানপুর তিন শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা নাজনীনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
জেবি/এমকে
মন্তব্য করুন