• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

উন্মুক্ত জলমহাল না থাকায় বেকার হাজারও মৎস্যজীবী পরিবার

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা

  ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫১

হাওরাঞ্চলের ১১টি উপজেলায় হাজারও মৎস্যজীবী পরিবার উন্মুক্ত হাওরে মাছ ধরতে না পারায় নৌকা ও জাল তুলে রেখেছেন ডাঙ্গায়। বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় মৎসজীবীদের জীবন-জীবিকা প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। এর ফলে কেউ কেউ জীবন বাঁচানোর তাগিদে এলাকা ছেড়ে জেলা শহর বা বিভাগীয় শহরে গিয়ে রিকশা চালানোসহ অন্য কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। হাওরবাসী ও বেকার জেলেদের ভিজিএফের আওতায় আনা ও উন্মুক্ত হাওরে মাছ ধরার দাবি থাকলেও কোনও কাজে আসছে না। ফলে জেলায় জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই-শাল্লাসহ ১১টি উপজেলায় হাওরগুলোতে মিঠা পানির সুস্বাদু মাছগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। হাওর ও নদীতে মাছ না পাওয়ায় বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী ৮৬ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে নানান অভাব অনটনের মধ্যে। জেলার ৮২টি হাওরে ৯৭৬টি জলমহাল রয়েছে। কিন্তু এইসব হাওর ও জলমহালগুলোতে প্রতি বছরেই অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলার স্থানীয় ইজারাদার ও প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হাওর এলাকার জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারে না। ফলে নৌকা ও জাল তুলেছে রেখেছে ডাঙ্গায়। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। ফলে হাওর পাড়ের মৎস্যজীবীরা এখন একবারেই বেকার সময় পাড় করছে। কারণ বছরের ছয় মাস শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করে আর বাকি বর্ষার ছয় মাস হাওরে বংশ পরম্পরায় মাছ ধরেই জীবন পরিচালনা করে আসছে তারা।

মৎস্যজীবীরা বলেন, হাওরাঞ্চলের প্রতিটি বাজারেই এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমরা মাছ ধরতে পারি না ইজারাদারদের বাধা দেয়ার জন্য। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছি। আমাদেরকে সরকারি কোনও সুবিধা দেয়া হয় না। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে পারলে আমাদের জীবন আর সংসার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারত।

হাওর পাড়ের জেলে ও স্থানীয় এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, মাছে-ভাতে বাঙালি কথাটি এখন বিলুপ্তির পথে। মিঠা পানির সুস্বাদু ছোট ছোট মাছগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে দিন দিন। ফলে সারা বছরেই হাওরাঞ্চলের বাজারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে পাঙ্গাস আর সিদঁল। কারণ ইজারাদাররা জলমহালগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে থাকে। কিন্তু জলমহালের পানি শুকিয়ে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও ইজারাদাররা তা মানে না। বাজারে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় তা খুবই সামান্য দাম বেশি থাকায় অনিহা প্রকাশ করছে সাধারণ জনগণ।

হাওরাঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ২-৩ বছর পূর্বে হাওরে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত আমরাও বেচাকেনা করে লাভবান হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেরা হাওরে এখন মাছ ধরতে যেতে পারছে না। তারাও আতঙ্কের মধ্যে আছে ইজারাদারদের কারণে। এ কারণে বাজারে আছে শুধুই পাঙ্গাস মাছ আর সিদঁল। মাছ যাও সামান্য পাই তা নিজেরেই চলে না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ইজরাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় জেলার হাওর ও জলমহালগুলো উন্মুক্ত নেই। ফলে কঠোর নিরাপত্তা আর মাছ ধরতে বাঁধা থাকায় মৎসজীবীরা হাওরের মাছ ধরতে পারছে না। মৎস্যজীবীদের স্বার্থে কার্যকর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া খুবেই প্রয়োজন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ইলিশের সিজনের মতো এই জেলার হাওর এলাকায় ভিজিএফের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন সভা সেমিনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এছাড়াও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা ও কাজের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন অক্টোবর থেকে ।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও মৎস্যমন্ত্রীর নজরে আনব। আর ঢালাওভাবে সবাইকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়। যারা প্রকৃত মৎস্যজীবী তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

আরও পড়ুন :

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh